Posts

Showing posts from February, 2019

‘মাতৃ ভাষা রুপে খনি, পূর্ণ মণিজালে

Image
দীপেন্দু চৌধুরী বেলা শেষের গান লিখতে বসেছি বলা যাবে না। বছর শেষের সংলাপ আবৃত্তি করছি সেটাও বলতে পারছি না। কারণ এই দিনে আমরা প্রতি বছর উচ্চারণ করব আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা নিয়ে বিতর্ক আজকের বিষয় নয়। ভাষাবিদরা টানা লম্বা এক বিতর্ক বাধিয়ে দিতে পারেন। এই বছর কলকাতা বইমেলায় এসে বাংলা ভাষার বৈচিত্রের কথা বলে গেলেন ‘হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতি’-র লেখক গুলাম মুর্শিদ। আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই বাংলা ভাষার কত বৈচিত্রের প্রসঙ্গে তিনি আলোচনা করে গেলেন। বললেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বাংলা ভাষার পার্থক্যের কথা। শব্দ চয়নের পার্থক্য, বাক্য গঠনের বৈচিত্র। আঞ্চলিক প্রকারভেদের প্রসঙ্গে তিনি বলে গেলেন। তার কথার বাস্তবতা পাওয়া যায় বিভিন্ন লেখায়। পূর্ববঙ্গ নামক একটি ভূখণ্ডের বৈচিত্রের একটি খন্ড ছবি উল্লেখ করা যাক। ‘বিক্রমপুরের ইতিহাস’-এ যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত লিখছেন, ‘’ ‘বাইদা’ বা বেদে নামক একশ্রেণীর পাবর্বত্য অসভ্য জাতীয় লোক বিক্রমপুরের বাণিজ্য-বন্দর সমূহের নিকটে নৌকা যোগে বসবাস করিয়া থাকে, ইহাদের স্ত্রী পুরুষ উভয় সম্প্রদায়ই ব্যাবসায়ে বিশেষ দক্ষ। ...ইহারা নদী, খাল, বিল হইতে অপর্যাপ্ত পরি

আত্ম-অন্বেষায় ‘নান্দীমুখ’ ছবির জীবনের রঙিন উৎসব

Image
দীপেন্দু চৌধুরী সমাজ এবং সময় আমাদের হাত ধরাধরি করে চলতে বলে। যেন একে অপরের বন্ধু। আবার আমরা কখনও কখনও সৃষ্টিশীল সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে পরস্পরের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল হই। একুশ শতাব্দীর বাঙালি সমাজ নিজেকে চিনতে, নিজের কথা চেনাতে নতুন কিছু কি ভাবছে?    সদ্য কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যেমন ২৪ বছরে পড়ল আবার বাংলা ছবির শতবর্ষ উদযাপন। ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের দিনে উৎসব কমিটির সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন ১৯১৮ সালে তৈরি নির্বাক কাহিনীচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’-এর কথা। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯১৯ সালের ৮ নভেম্বর। চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদরা বলেন, ১৯১৮ সালের অনেক আগে বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক হীরালাল সেন নাটকের ছবি তোলেন। এবং বানান বিঞ্জাপনের জন্য ছবি। ১৯১৭ সাল থেকে বাংলা সিনেমার শুরু হলেও অথবা মতান্তরে ১৯১৮ সালে তৈরি বাংলা ছবি বিল্বমঙ্গল নির্মাণ হওয়ার ঢের আগে হীরালাল সেন ছবি করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ১৯০৫ পর্যন্ত হীরালাল সেন-এর যুগ। শিশির মঞ্চ সংলগ্ন অভিজাত প্রদর্শনী সভাঘর ‘গগনেন্দ্র প্রদর্শন সভাঘরে’-এ আটদিন ধরে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র এবং সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী চিত্রপ্রদর্শনীর

প্রতিবাদ-প্রতিবাদীর স্বর ‘নান্দনিক’ ঘরানা দাবি করে

Image
দীপেন্দু চৌধুরী ডোর বেল বাজতেই আমি দরজা খুলে দেখতে বেরলাম। কারণ সকাল এগারটায় সাধারণত আমাদের বাড়ি কেউ আসে না। হকার, হকারনি থুরি মহিলা হকার কেউ আস্তে আগ্রহী নয়। কারণ স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে তাঁরা জেনে গেছে এঁদের সীমাবদ্ধ আয়। এঁরা গোষ্ঠগোপালের আত্মীয়। গোষ্ঠগোপালের মতই জীবন যাপন। দরজা খুলে দেখি কমল এসেছে। আপনাদের মনে আছে কমল আমার ছোটবেলার  বন্ধু। বীরভূমের বন্ধু। খুব সম্ভবত বছর দুয়েক পরে এল। কমলের পোশাক দেখে না হেসে থাকতে পারলাম না। আমি গ্রীলের গেট খুলতেই কমল সেলাই করা প্ল্যাস্টিক চপ্পল খুলে ঘরে ঢুকে পড়ল। জামা বলতে একটা হাত কাটা গোল গলার জামা। হাঁটুর নীচে পর্যন্ত ঝুলছে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে চন্দনের তিলক। নাকে লাল রঙ লাগানো। কাঁধে মার্কিন কাপড়ের তৈরি বোষ্টমী ব্যাগ। ঘরে ঢুকেই হাত কাটা গোল গলার জামাটা তুলে বলল, ‘এই দ্যাখ দ্যাখ, দ্যাখ ক্যানে, আমি ল্যাংটা হুং আসিয়েনি। শর্টস পোড়াছি। তু ভেবাছিস জামার তলায় কিছু লায়? তুদের নাগরিক ফুটপাথ থেকি অনেক খুঁজি তবে এই প্যান্ট পেয়াছি। বাবু হকার গুলান বুলছে বারামুডা আছে। আমি এই প্যান্টটো পেলাম। লিং লিলাম।’ আমি মুচকে হাসতে হাসতে বললাম, ‘আমি

যুক্তিবাদী কলমে লেখা বাংলার ‘হাংরি’ প্রজন্মের উপাখ্যান

Image
দীপেন্দু চৌধুরী মানব সভ্যতার প্রথম যুগে ‘বুদ্ধিজীবি’ শব্দটার সঙ্গে তৎকালীন সভ্যতার কোনরূপ পরিচয় ছিল না। পরিচয় থাকার কথাও নয়। তবে ‘মোড়ল’ শব্দ অথবা সর্দার শব্দ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তার কারণ একটি গোষ্ঠীর মাথা হিসেবে একজন ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা এবং কৌশলী ক্ষমতা। পাশাপাশি এই সম্প্রদায়ের সুচতুর বৌদ্ধিক বিকাশের ফলে সমাজ পেয়েছিল বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা। এই বর্ণাশ্রমের কারণে সমাজকে চারটে ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রথম বর্ণের মানুষেরা ‘বর্ণশ্রেষ্ঠ’ হওয়ার দাবিতে সমাজের পরিচালন ব্যবস্থার শীর্ষে অবতরণ করার অধিকার পায়। পরে এরাই বুদ্ধি চর্চার ‘টোল’-এর অন্যতম কারিগর হয়। এঁদেরকেই সভ্যতার অগ্রগামী বাহিনী হিসেবে ধরে নিয়ে বুদ্ধিজীবীর তকমা দেওয়া হল। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যাবস্থায় সব নাগরিককে তিনটে স্তরে ভাগ করা হয়েছিল। শ্রমিক, কৃষক এবং বুদ্ধিজীবী।   সভ্যতার প্রথম যুগে অধিকাংশ মানুষ ছিল শিকারি এবং পশুপালক। পরে এল কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য ইত্যাদি। কায়িক শ্রমের তুলনায় মানসিক শ্রম ছিল সেই সময় কম। কিন্তু বৌদ্ধিক শ্রেণির উত্থানের পরে মানসিক শ্রম বাড়তে থাকে। এবং মানসিক শ্রম আলাদাভাবে গুরুত্ব দাবি করে সমাজ পরিচালন

বিচ্ছিন্নতা নয় মানবিক ‘অনুভূতি’ হোক নতুন ভারতের আহ্বান

Image
দীপেন্দু চৌধুরী  পুলওয়ামার জঙ্গি হানার পর এপর্যন্ত ৪৯ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। গোটা দেশে শোকের পরিবেশ। দেশের শহর গ্রাম গঞ্জ পাড়া, আধুনিক মল, ট্রেন বাসে, পুরনো হাট বাজারের স্বাভাবিক ছন্দ থাকলেও আলোচনার খাতায় হিজিবিজি শব্দ। বিষয় কাশ্মীর এবং জম্মু। আজকের (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্রভাতি সংবাদপত্রের ভেতরের দিকের পাতার খবরের শিরোনাম ‘জম্মুতে নিশানায় কাশ্মীরিরা’ । এবং সংবাদের বিস্তারে প্রকাশ পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার জেরে কার্যত বিরোধ দেখা দিয়েছে জম্মু এবং কাশ্মীরের মধ্যে। জম্মুতে জনতার হামলায় আহত হয়েছেন ৩৭ জন। পুলওয়ামারে জঙ্গি হানা অবশ্যই এক কথায় ঘৃণ্যতম কাজ। পাশাপাশি এটাও একশো শতাংশ সত্যি ভারতের জম্মুর সব ধর্ম বর্ণের মানুষ আমাদের আত্মীয়। আমাদের স্বজন। মানবতার দর্শন বলে ঘৃণা নয় ‘আলিঙ্গন’ হোক আজকের ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম দুই দেশের আম নাগরিকদের প্রাত্যহিক দাবি। ঝড়া পাতার শোক মুছে যাক মানবতার ডাকে। বয়ে আনুক নতুন বসন্তের সূর্য ওঠার ভোর। প্রথমপাতায় সংসদীয় নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রের সংসদীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে (১৬

বাংলা এগিয়ে মানে ভারত এগিয়ে

Image
দীপেন্দু চৌধুরী গত বছর ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’- এ এসে মুকেশ অম্বানি বলেছিলেন, ‘’দিদি, আপনার নেতৃত্বে ওয়েস্ট বেঙ্গল ‘বেস্ট বেঙ্গল’ হয়েছে।‘’  ভারতের বৃহত্তম শিল্প গোষ্ঠীর কর্ণধারের বলা গত বছরের কথাগুলির প্রমাণ এ বছর পেলাম আমরা। রাজ্যের ‘শিল্পবান্ধব’ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানসিকভাবে এতটাই দৃঢ় যে, শুধু নিজের রাজ্যের জন্য নয়। সারা দেশের জন্য বিনিয়োগ আহ্বান করলেন এই বছরের বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলন থেকে । রাজ্য ছাড়িয়ে সারা দেশের জন্য ভাবছেন সুপ্রশাসক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা ভারতের গণ আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ।   চলতি বছরের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা তাৎক্ষণিক কোনও বিষয় নয়। সুচিন্তিত মতামত বলতে হবে। রাজ্যের বিরোধী দলগুলি রাজ্যের বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান নিয়ে যতই সমালোচনা করুক ‘বাণিজ্য-বন্ধু’ রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ স্বীকৃতি পেয়েছে এক বছর আগেই। প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি অ্যান্ড প্রোমোশন (ডিআইপিপি) রাজ্য গুলির র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। ‘বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান’ নামে ওই র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০১৭

ভাষামেলা বই বেলা

Image
দীপেন্দু চৌধুরী ছেলেটির হাতে গুপি যন্ত্র। প্রাণ খুলে, গলা ছড়ে বাউল গান গাইছে, ‘’নিশীথে যাইও ফুলবনে রে ভোমরা/ নিশীথে যাইও ফুলবনে।।/ নয় দরোজা করি বন্ধ/ লইয়ো ফুলের গন্ধ হে/ অন্তরে জপিয়ো বন্ধুর নাম হে ভোমরা। বাউল ছেলেটির সঙ্গে আলাপ জমালাম। জানতে পারলাম ও বীরভূমের জয়দেব কেন্দুলির কাছে একটা গ্রামে থাকে। স্নাতক পাশ করে চাকরি না পেয়ে চাষবাস করে। বাড়িতে কয়েক বিঘা জমি আছে। তাই বাউল গান গেয়ে মাধুকরী করতে হয় না। তবে ওর গান শুনে কেউ দু’চার টাকা দিলে আপত্তি করে না। ওর কথায় ‘বিজন ঘরে এসে পড়ি যখন পেটটোতো চালাতে হবেক? কি বুলেন? মুখে ভাষা আছে কলাখোলায় শুইয়ে পড়লি হল।’’ আমরা গত কয়েক দশকে জেনে গেছি কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলা বিশ্বের সেরা বইমেলা। আবার কেউ কেউ দাবি করছে এই বই মেলাকে ভাষামেলা বললে কি অত্যুক্তি হবে? ২ ফেব্রুয়ারি ছিল ভয়েস অব আমেরিকার একটি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল কলকাতার আমেরিকান সেন্টার। ইউ এস প্যাভেলিয়নে এই অনুষ্ঠানে আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শ্রোতারা এসেছিলেন। ছিলেন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদশের শ্রোতা। সুদূর বাংলাদেশ থেকে কলকাতা বই মেলায় এসে ওইদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ভয়েস অ

মেঘঝর্ণা

Image
দীপেন্দু চৌধুরী:  তোমার পূর্ণ প্রেম, প্রশ্রয় চাহনি— শীত শেষের বাসন্তী শাড়ি, লাল মাটির নীরব সোনালী রোদ, আজ আবার মনে পড়ে, ন্যায়-অন্যায়ের বেড়া ভাঙ্গা— দোয়াত-কলমের অলস সংসারে। আগত বসন্তের ঝরা পাতা বয়ে আনে   বিগত বসন্তের সবুজ প্রেমের ধ্রুবপদ। সংসারে অপূর্ণ বোধ শেষে— আজ তুমি সম্পূর্ণা, মেঘঝর্ণা,  সারস্বত সাধনায় মুক্তি পেলে—   ভালোবাসার অহংকারে!