Posts

Showing posts from May, 2022

নতুন প্রজন্মের ‘আত্মীয় সভা’-র নতুন আঙিনা খুঁজে নিতে হবে

Image
  দীপেন্দু চৌধুরী মাস খানেক আগে হুগলি জেলার খানাকুল ব্লকের রাধানগর গিয়েছিলাম। আমরা প্রায় সকলেই অগবত আছি যে, রাধানগর নামক এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায়।যাকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক ভারতের ঋত্বিক। রামমোহনের জন্মভিটে রাধানগরে একটি মজার গল্প শুনলাম। বছর পঁয়তাল্লিশ বয়স হবে মণিকা কুণ্ডুর(নাম পরিবর্তিত)।তার যখন ১৩ বছর বয়স মানে আজ থেকে ৩২ বছর আগের ঘটনা।মণিকার দিদিমা কনকনে পৌষমাসের শীতের এক কাকভোরে মণিকাকে ঘুম থেকে তুলে বলছে, এই দিদি ওঠ ওঠ। চল আমার সঙ্গে চল। শীত ভোরে ঘুমকাতুরে মেয়ের লেপের ওম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে? কুয়াশায় ঢাকা আকাশে তখনও রাতভোরের অভিমান। টুপটাপ শিশিরের জলে সবুজ পাতায় রূপালি জল নূপুরের ছন্দ দেখতে দেখতে রাস্তায় চলে। দিদিমার কথায় সে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিদিমার কাছে জানতে চায়, শীতের এই ভোরে কোথায় যাবে? দিদিম হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আজ সন্ধ্যেয় যখন বাড়ি আসছিলুম রামমোহনের গায়ে কোনও জামা সোয়েটার কিচ্ছু ছিলনি। চল একটা কম্বল দিয়ে আসি। মণিকা সেদিন তার দিদিমার সঙ্গে গিয়ে রাজা রামমোহন রায়ের স্ট্যাচুতে কম্বল পড়িয়ে দিয়ে এসেছিল।রামমোহন শীতে কষ্

কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প বা একশো দিনের কাজের বিকল্প কি?

Image
দীপেন্দু চৌধুরী বিগত দুটি দশকের দেশের প্রধান সমস্যা বিপুল সংখ্যক মানুষের চরম দারিদ্র।গরিব মানুষের কার্যকর ক্ষমতা বলতে আর কিছু নেই। উন্নয়নের নামে যে অর্থনীতির কথা বলা হচ্ছে, সেই নীতিতে গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোনও আলোর দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা। বর্তমান মোদী সরকারের আমলে গালভরা প্রতিশ্রুতির কথা বলা হলেও ‘মর্যাদার সঙ্গে উন্নয়ন’-র নামে গ্রামীণ গরিব মানুষকে কি আরও সমস্যার মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ভারতে চালু হয়েছিল কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প। যে প্রকল্পের পোশাকী নাম বা সরকারি নাম মহাত্মা গাঁধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প(এমজিএনআরইজিএ)।ইউপিএ সরকারের আমলে এই প্রকল্পকে ‘ঝোলাওয়ালা অর্থনীতি’-ও বলা হত। ২০১৪ সালে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারের  প্রধানমন্ত্রী হয়েই নরেন্দ্র মোদী জাতীয় কর্মসংস্থান প্রকল্পকে ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ বলেছিলেন।অথচ লকডাউনের পরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পই গ্রামে ফিরতে বাধ্য হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ভরসা হয়ে উঠেছিল।তবুও গত কয়েক বছর ধরে মোদী সরকার এই প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিচ

বাংলার আকাশ বাঙালির মল্লার

Image
দীপেন্দু চৌধুরী রবীন্দ্র জয়ন্তী আসে চলে যায়।আমরা রবীন্দ্র চর্চায় বুঁদ হয়ে থাকি। হুজুগে বাঙালি খড় বৈশাখের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষে ভর পেট খাই।ঢেঁকুর তুলি।বাঙালি পোশাকে সাজুগুজু করে পোশাকি বাঙালির প্রদর্শন করতে নেমে পড়ি। তারপর সারা বাংলা রাবিন্দ্রীক আঙিনায় নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার ইঁদুর দৌড়ে ছুটতে থাকি। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য থেকে আমরা বহু যোজন দূরে থেকে যাই। সম্প্রতি একটি নিবন্ধে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, আমি নিজেও বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে লিখি বেশি।তিনি নিজের লেখায় ব্যাখ্যা করেছেন, ‘অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে কথাটা ঠিক, জাতির জীবনে বাঙালির যে অবস্থান ছিল, একশো বছর আগে, তা পড়ে গিয়েছে। ২০২২ সালের বাংলা ভারতের দরিদ্রতর রাজ্যের অন্যতম। ম্যাড্রাস, বম্বে, দিল্লি, আমদাবাদ সব এখন কলকাতার থেকে এগিয়ে গিয়েছে। বাঙালি ছেলেমেয়েরা বেঙ্গালুরু, গুড়গাঁও ছুটছে চাকরির খোঁজে।’ এই কথাটা কদিন আগে মনে করিয়ে দিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি প্রথম সারি বাংলা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দফতরের এক মননশীল কর্মী। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, আমরা বাঙালি জাতি, ভাষা ইত্যাদি নিয়ে হরবখত আলোচনা করছি। কিন্তু

একুশ শতাব্দীর নবনালন্দার আশা ও স্বপ্নের স্রোত

Image
দীপেন্দু চৌধুরী সামাজিক মানদণ্ডে বিচার করলে দেখতে পাব সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমান সময়েও অত্যন্ত জটিল অবস্থায় আছে।শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষঞ্জদের অভিমত এমনটাই। ভারতবর্ষ এমনই একটি দেশ যে দেশে আজও জাতিভেদ প্রথার অনুভূতিশীল রঙিন বৈচিত্র রয়েছে।ভাষায় সাজিয়ে বলতে হয় বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য।শুধু দলিত বা বহুজন সম্প্রদায় নয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ও আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই সব সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পরেও ন্যায় বিচার হয়নি। বর্তমান ভারতের অবস্থা আরও জটিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শিক্ষাকেও ধর্মীয় আঙিনায় এনে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত গৌরববর্ধক সম্মান চিহ্ন। পোশাকি নাম শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নামী অথবা সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শংসাপত্র প্রতিযোগিতামূলক চাকরির ক্ষেত্রে কতটা সাহায্যে আসে? প্রশ্নটা বিগত কয়েক দশক থেকে রয়েই গিয়েছে।সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি আমাদের চমকে দিয়েছে। বিহারের পাটনার গঙ্গার তীরে সপ্তাহের শেষে জমায়েত হয় বহু যুবক।সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রের বিভিন্ন চাকরির জন্য

আমাদের স্বজন, ‘আত্মীয় সভা’-র অত্যত্ন কাছের জন

Image
  দীপেন্দু চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা তথা ভারতের জনমানস থেকে মুছে ফেলার একটা সূক্ষ্ম প্রয়াস এক শত বছর আগেও ছিল। বিগত কয়েক বছরে আবার এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অপ্রত্যক্ষ ভাবে হলেও রবীন্দ্রানাথকে নতুন করে আক্রমণ করার চেষ্টা হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে নীরদ চন্দ্র চৌধুরী একটি প্রবন্ধে লিখছেন, ‘’.........‘আমরা রবি ঠাকুরকে দেখতে নারি, তাই তার ভাষা ও ছন্দ বাঁকা।’ কিন্তু তাঁহার প্রতি বিদ্বেষ বাঙালি সমাজে আরও একটা ব্যাপক বিদ্বেষের অংশ। এই বিদ্বেষটা বাঙালির মধ্যে সমস্ত উনবিংশ শতাব্দী জুড়িয়াই বর্তমান ছিল। উহা রামমোহনের ক্ষেত্রে, কেশবচন্দ্র সেনের ক্ষেত্রে, ব্রাহ্মসমাজের ক্ষেত্রে দেখা গিয়াছিল’’। আমাদের স্বজন, ‘আত্মীয় সভা’-র অত্যত্ন কাছের জন, ‘ছেলেটা’ কবিতার কবি তিনি। না তাকে ঈশ্বর আমরা করতে চাইনি, করতে চাইও না। তিনি আমাদের বাংলা তথা ভারতীয় উপ-মহাদেশের হ্রদয়ে আছেন। বাঙালির মননে আছেন। ধ্রুপদে আছেন। রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারত-র মতই আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন। নাগরিক সংস্কৃতি তথা লোক সংস্কৃতির চিরায়ত আঙিনায়। সাহিত্য পাড়ার ধমনীতে।জয়তু রাম মোহন, জয়তু রবীন্দ্রনাথ।        

শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই বায়ুদূষণের প্রভাব শুরু হয়।

Image
  দীপেন্দু চৌধুরী পরিবেশ, পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও গত দু’বছরের অভিঞ্জতা আমাদের অন্য কথা বলছে। করোনা সভ্যতার অভিঘাত সামাজিক ভারসাম্যকে যে কতটা টালমাটাল করে দিয়েছে সেই বিষয়ে পরিবেশ বিঞ্জানী, চিকিৎসক এবং তামাম বিশ্বের শিক্ষকমণ্ডলী অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় আছেন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে সমস্ত মৃত্যুর ২৩ শতাংশের কারণ ভারসাম্যহীন পরিবেশ। এই পরিবেশের জন্য আমরাই দায়ি।বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ অরুপ হালদার একান্ত আলাপচারিতায় বললেন, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে, হাঁপানিজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত প্রথমস্থানে আছে। এবং সিওপিডি( COPD )মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয়স্থানে আছে। যদিও অন্যান্য দেশে সিওপিডি ধূমপায়ীদের একটি রোগ হিসেবে পরিচিত, ভারতে আমরা বেশিরভাগ ‘অধূমপায়ী সিওপিডি’ দেখতে পাই। তাই আমাদের দেশে সিওপিডি-র প্রধান ঝুঁকির কারণ হল, পরিবেশের বায়ুদূষণ, গৃহস্থালির বায়ুদূষণ এবং পেশাগত বায়ুদূষণ। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে কলকাতার পিএম ২.৫-র মাত্রা ২০২১ সালে ছিল ৫৯ মাইক্রোগ্রাম। দু’বছর আগের তুলনায় বৃদ্ধির হার প্রায় ২৬ শতাংশ। তুলনামূলক আলোচনায় বলা হচ্ছে