শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই বায়ুদূষণের প্রভাব শুরু হয়।






 দীপেন্দু চৌধুরী

পরিবেশ, পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও গত দু’বছরের অভিঞ্জতা আমাদের অন্য কথা বলছে। করোনা সভ্যতার অভিঘাত সামাজিক ভারসাম্যকে যে কতটা টালমাটাল করে দিয়েছে সেই বিষয়ে পরিবেশ বিঞ্জানী, চিকিৎসক এবং তামাম বিশ্বের শিক্ষকমণ্ডলী অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় আছেন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে সমস্ত মৃত্যুর ২৩ শতাংশের কারণ ভারসাম্যহীন পরিবেশ। এই পরিবেশের জন্য আমরাই দায়ি।বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ অরুপ হালদার একান্ত আলাপচারিতায় বললেন, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে, হাঁপানিজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত প্রথমস্থানে আছে। এবং সিওপিডি(COPD)মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয়স্থানে আছে। যদিও অন্যান্য দেশে সিওপিডি ধূমপায়ীদের একটি রোগ হিসেবে পরিচিত, ভারতে আমরা বেশিরভাগ ‘অধূমপায়ী সিওপিডি’ দেখতে পাই। তাই আমাদের দেশে সিওপিডি-র প্রধান ঝুঁকির কারণ হল, পরিবেশের বায়ুদূষণ, গৃহস্থালির বায়ুদূষণ এবং পেশাগত বায়ুদূষণ।

আন্তর্জাতিক সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে কলকাতার পিএম ২.৫-র মাত্রা ২০২১ সালে ছিল ৫৯ মাইক্রোগ্রাম। দু’বছর আগের তুলনায় বৃদ্ধির হার প্রায় ২৬ শতাংশ। তুলনামূলক আলোচনায় বলা হচ্ছে, দিল্লির মাত্রা থেকে কম হলেও ভারতের অন্যান্য মেট্রো শহরগুলির তুলনায় কলকাতার দূষণের মাত্রা নজরে পড়ার মতো বেশি। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, দেশের দিল্লি সহ অন্যান্য ব্যস্ত ও জন বিস্ফোরণের শহরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আমাদের প্রিয় শহর কলকাতা। কলকাতার বাতাসে পিএম ২.৫(PM 2.5)-এর ঘনত্ব বর্তমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO)-র পরিমাপ থেকে ২০ গুণ বেশি। যদিও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতায় AQI স্তর ছিল ২২৬-র কাছাকাছি। বিগত কয়েক বছরের পিএম ২.৫ ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, আগামী মাসগুলিতে কলকাতা শহর উচ্চমাত্রায় দূষণের মুখোমুখী হবে।   

দূষণ বিষয়ক এই রিপোর্ট রাজ্যের পরিবেশ বিশেষঞ্জ, স্বাস্থ্য বিশেষঞ্জ চিকিৎসকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষঞ্জ চিকিৎসকদের অভিমত, বাতাসে থাকা অতি সূক্ষ কণা পিএম ২.৫ ফুসফুসের গভীরে সহজ ভাবে প্রবেশ করতে পারে। দুষিত এই ধুলি কণা ক্যানসার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সূক্ষ্ম কণা কতটা ক্ষতি করতে পারে সেই বিষয়ে বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ অরুপ হালদার একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে, হাঁপানিজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত প্রথমস্থানে আছে। এবং সিওপিডি(COPD)মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয়স্থানে আছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা যাচ্ছে, সাবলীল প্রবাহিত স্নিগ্ধ বাতাসে অবাঞ্ছিত এই কণার উপস্থিতি মানব শরীরের পক্ষে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকারক হিসাবে চিহ্নিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই কণার বার্ষিক সর্বচ্চো সীমা তারা নির্ধারণ করেছে ৫ মাউক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান ধরলে, ২.৫-এর মাত্রা হু(WHO)-র নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি। অন্যান্য বিশেষঞ্জ চিকিৎসকদের অভিমত, বাচ্চারা বায়ুদূষণ থেকে বিশেষ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। কারণ তাদের ফুসফুসের বৃদ্ধি শৈশবকালে সম্পূর্ণরূপে হয় না। শিল্প শ্রমিকরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা ছাড়াও নিউমোকোনিওসিস, অ্যাসবেস্টোসিস, সিলিকোসিস এবং পেশাগত স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলির মতো আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই কারণে এই সব গোষ্ঠীগুলিকে পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি সতর্ক করা ও সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কথা জানাচ্ছেন কলকাতার একদল বিশেষঞ্জ চিকিৎসক।

অন্যান্য বিশেষঞ্জ চিকিৎসকদের অভিমত, বাচ্চারা বায়ুদূষণ থেকে বিশেষ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। কারণ তাদের ফুসফুসের বৃদ্ধি শৈশবকালে সম্পূর্ণরূপে হয় না। শিল্প শ্রমিকরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা ছাড়াও নিউমোকোনিওসিস, অ্যাসবেস্টোসিস, সিলিকোসিস এবং পেশাগত স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলির মতো আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই কারণে এই সব গোষ্ঠীগুলিকে পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি সতর্ক করা ও সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কথা জানাচ্ছেন কলকাতার একদল বিশেষঞ্জ চিকিৎসক।অভিঞ্জতা থেকেই বলা যায় রাজ্যের বীরভূম জেলার পাথর খাদানগুলির কথা। পাথর বোঝাই ট্রাক-ডাম্পার যাতায়াতের কারণে খাদান সংলগ্ন রাস্তার বেহাল অবস্থা। শ্রমিক, শিশুশ্রমিক এবং স্থানীয় মানুষের নিত্য সঙ্গী ধুলো।বায়ুদূষণ থেকে যে সব সমস্যার সামনে আমাদের পড়তে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, লিভার ফাইব্রোসিস, লাং এবং লিভার ক্যানসার, হার্ট স্ট্রোক ছাড়াও হাড়ের সমস্যা হতে পারে।শ্রমিকদের প্রতি ছ মাস অন্তর ফুসফুস পরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা হয় না। ফলে ধুলো থেকে শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ হয়। ১৪ হাজার দূষণ-প্রবণ সংস্থার দূষণ সংক্রান্ত বিষয় নজরদারির জন্য ইনসপেক্টরের সংখ্যা অত্যন্ত কম।      

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পর্যবেক্ষণ, আমাদের রাজ্যের পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের মাত্রা(ambient air pollution level)বছরের বেশিরভাগ সময় অনুমোদনযোগ্য(permission limit)মাত্রার মধ্যেই থাকে।তবে শিল্প এবং যানবাহন বাতাসের গুণমানকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে শীতের মরসুমে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী যমজ শহর কলকাতা ও হাওড়ার স্থায়ী বাসিন্দারা বায়ুদূষণের শিকার হয়ে থাকেন। শীতকালে এই দুটি শহরের ধুলিকণার মাত্রার পরিমাণ থাকে যথাক্রমে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫। রাজ্যের বেশিরভাগ জেলা সদরগুলিতেও শীতের মরসুমে জাতীয় মানের তুলনায় বেশি মাত্রায় ধুলিকণার ঘনত্ব থাকে।                   

উল্লেখিত দূষণগুলির তীব্রতা বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারনা অত্যন্ত দুর্বল বলা যায়। কিছুদিন আগের একটি সমীক্ষার মতে, ভারতে মানুষ গড়ে ৫৯ বছরের বেশি বাঁচতে পারে যদি আমাদের দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO)-র নির্দেশিকা মেনে চলে। যেহেতু ভারতে বর্তমান সময়ে মানুষের আয়ু ৭১ বছর(করোনা অতিমারির আগে), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে সারা দেশে দূষণ কমাতে পারলে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হবে ৭২ বছর। ২০১৯ সালের একটি বিশ্লেষণ থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রায় ৫১০ মিলিয়ন মানুষ সমস্ত উত্তর ভারতে গড়ে কমপক্ষে ৮.৫ বছর বেশি বাঁচবে। সমীক্ষার বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা যাচ্ছে, এই সব লোকেরা ভারতের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।

কলকাতার বাতাসে পিএম ২.৫(PM 2.5)-এর ঘনত্ব বর্তমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO)-র পরিমাপ থেকে ২০ গুণ বেশি। যদিও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতায় AQI স্তর ছিল ২২৬-র কাছাকাছি। বিগত কয়েক বছরের পিএম ২.৫ ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, আগামী মাসগুলিতে কলকাতা শহর উচ্চমাত্রায় দূষণের মুখোমুখী হবে।বায়ুদূষণের সঙ্গে নতুন সংযোজিত অধ্যায় হিসাবে আমাদের সামনে এসে পড়েছে করোনা নামক মহামারির সঙ্গে লড়াই।             

করোনা অতিমারিতে পরিবেশ দূষণ নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, কোভিড-১৯ নামক মহামারি মানবসভ্যতা, বন্যপ্রাণী জীববৈচিত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব ফেলেছে।এই সকল বিষয়ে আলোকপাত করতে জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ ইত্যাদি নিয়ে চর্চা দীর্ঘদিন থেকে চলছে।মহামারির আগে থেকেই বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক আবাসস্থলের উপর মনুষ্য সমাজের ক্রমবর্ধমান চাপ পরিবেশগত চাপ তৈরি করতে সহায়ক হয়েছে। উদাহারণ আমাদের হাতের সামনেই রয়েছে, সুন্দরবনের বাঘ লোকালয়ে চলে আসার ঘটনা।

বিগত বছরের ১৬ ডিসেম্বর একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের বায়ুদূষণের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের রাস্তা খোঁজার কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টকে আমজনতা এবং বিশেষঞ্জদের পরামর্শ চাইতে বলেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ করা যায়, দু’বছর আগে দূষণ নিয়ে একটি মামলার পর্যবেক্ষণ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তের বেঞ্চ অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছিলেন, দেশের বায়ুদূষণ বিষয়ে কেন্দ্রীয়  সরকারের উদাসীনতা ও সদিচ্ছার অভাব(ল্যাক অব অ্যাকশন ইন টেকিং এয়ার পলিউশন ইন দ্য কান্ট্রি)-র জন্য বছরের পর বছর অ্যাপেক্স কোর্টে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। পরে আলাদাভাবে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দেশের মানুষ দূষণের মধ্যে বেঁচে আছেন বাধ্য হয়ে।অনেকটা গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার মতো।’   

পরিবেশগত সংকট মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষঞ্জরা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন ঠিকই।মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনযাপন করার প্রয়োজনে সচেতনতা বাড়ানোর দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে বলছেন তাঁরা। সম্প্রতি কলকাতার নাম করা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের স্বনামধন্য প্রথমসারির কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যঅনুশীলনকারী কর্মীদের দ্বারা অনুমোদিত একটি ‘স্বাস্থ্য পরামর্শ’ প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশের মাধ্যমে রাজ্যের নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে পরামর্শ অনুসরণ করলে নাগরিকরা বায়ুদূষণের কারণে শারিরীক অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে পারবে। শীতকালীন ঋতুতে বায়ু দূষণের প্রভাব থেকে বাঁচতে দৈনন্দিন জীবনে এই পরামর্শ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড রাসায়নিক প্ল্যান্ট থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস মিথাইল আইসোসায়ানেট এবং অন্যান্য গ্যাস নিষ্কাশন হয়। সেই দুর্ঘটনার কারণে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বায়ু দূষণের অভিঞ্জতার কথা আজও মানুষ ভুলতে পারে না।ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনায় যেসব মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ও যারা আজও সেই অভিশপ্ত রাতের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে তাঁদের স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয় ‘জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস’ হিসাবে। ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার এতদ অঞ্চলের মানুষ আজও দুরারোগ্য শ্বাসজনিত অসুখে ভুগছে। কলকাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের নামকরা ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণ, বিগত শতাব্দীর আশির দশকের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার সঙ্গে বর্তমান সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ু দূষণের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধনের মিল রয়েছে।২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ছিল ‘জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস’।ওই দিন ‘ডক্টরস ফর ক্লিন এয়ার’(DFCA)ফোরাম ও সুইচঅন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কলকাতা প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করছিল।সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশের মাধ্যমে রাজ্যের নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।যে পরামর্শ অনুসরণ করলে নাগরিকরা বায়ুদূষণের কারণে শারিরীক অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে পারবে। আসন্ন শীতকালীন ঋতুতে বায়ু দূষণের প্রভাব থেকে বাঁচতে দৈনন্দিন জীবনে এই পরামর্শ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।লাং কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা  ডাঃ অরবিন্দ কুমার একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘’শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে, তখনই বায়ু দূষণের প্রভাব শুরু হয়। এই দূষণ জীবনের প্রথম নিঃশ্বাস থেকেই আমাদের মধ্যে দূষণ ছড়ায়।‘’

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বিভিন্ন দেশের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ প্রশমনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। পাশাপাশি ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলির জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে উন্নত দেশগুলির বার্ষিক ১০০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি।২০১৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারগভারমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ(আইপিসিসি)-র বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। আইপিসিসি-র বিঞ্জানীদের পরামর্শ থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী দিনে বিশ্বের তাপমাত্রা-বৃদ্ধি প্রাকশিল্পায়ন যুগের তুলনায় আরও কমিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ ২ ডিগ্রির পরিবর্তে ১.৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে হবে। সেটা করতে না পারলে আগামী দিনে মানুষ আরও দূষণ বিপর্যয়ের মুখোমুখী হবে। বিঞ্জানীদের অভিমত, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ ২০১০-র অর্ধেক এবং ২০৫০ সালে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।আইপিসিসি-র বিঞ্জানীদের আরও বক্তব্য, এই অবস্থায় আমাদের পৌঁছতে হলে নিবিড় বনাঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমে এবং প্রযুক্তির সাহায্যে ২০৫০ সালের আগামী প্রজন্মের পৃথিবীর জন্য গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎপাদন ও অপসারণের সমতা আনতে হবে। বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা কতটা সফল হতে পারেন সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা।                       

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?