আত্মহত্যাঃ প্রতিরোধ ও দায়বদ্ধতা
দীপেন্দু চৌধুরী
১৯৯০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস
অব আ চাইল্ড’ শিরোনামে মানবাধিকার চুক্তিটি কার্যকর হয়।এক কথায় বলা যায়, ছোটদের মানবাধিকার।
এবং শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষার চুক্তি। আমাদের দেশ ভারত ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে
এই চুক্তিতে সই করে।আমাদের বিষয় ছোটদের অবশ্যই।তার আগে ভাবাচ্ছে ছোটদের যারা নিরাপত্তা,
মানবাধিকার দেবে তাঁরা মানসিক দিক থেকে কতটা শক্ত-সাবলিল? সামজ সচেতন আধুনিক মানুষ
যখন সিদ্ধান্তে আসে, পৃথিবী তাঁর কাছে গদ্যময়। সন্তান, সংসারের আবেগ তাঁকে আর টানছে
না।অদৃশ্য কিছু একটা না পাওয়ার ব্যর্থতা ইহজগতে সম্পর্কে অনীহা আনে।নিঃশব্দে সেই ব্যক্তি
তার চেনা আকাশকে অবাক করে দিতে চায়। আমরা সবিস্ময়ে অকস্মাৎ আবিস্কার করি, চেনা মানুয়াটি
কখন যেন ‘নেই মানুষ’ হয়ে গেল। আমরা আত্মহত্যার প্রসঙ্গে এই কথা বলতে চাইছি।
ন্যাশন্যাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো(এনসিআরবি)২০২২ সালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালে সারা ভারতে ১,৬৪,০৩৩টি আত্মহত্যর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। সরকারি নথিভুক্তির বাইরে আরও ‘আত্মহত্যা’ থাকতে পারে। যে ঘটনা সরকারের কাছে এসে পৌঁছয়নি। এনসিআরবি-র ২০২২ সালের রিপোর্ট দাবি করেছে, বিগত বছরের তুলনায় ২০২১ সালের আত্মহত্যার ঘটনা ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় আত্মহত্যার হার ১২। ২০২০-২০২১ মানবাধিকার বছরে ভারতে আত্মহত্যর হার ৬.২ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। ওই বছরের আত্মহননের হার ১৯৬৭ সালের আগে এতটা বাড়তে দেখা যায়নি।প্যানডেমিক বা কোভিড-১৯ নামক মহামারি বিগত দু’ই বছরে আত্মহত্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১ সালে নারী-পুরুষ আত্মহত্যার হার ছিল ৭২.৫:২৭.৪।তুলনামূলক আলোচনায় ২০২০ সালে এই হার ছিল ৭০.৯:২৯.১।রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে ২০২০ সালের তুলনায় ওই বছরে পুরুষ আত্মহত্যার হার বেড়েছে।
এই রিপোর্টের তথ্য থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে, কোন রাজ্যে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান কত। মহারাষ্ট্র এই তালিকায় শীর্ষে আছে।পরের রাজ্যগুলি হচ্ছে, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং কর্ণাটক। সারা দেশে আত্মহত্যার ৫০.৪ শতাংশ এই পাঁচটি রাজ্যে ঘটেছে। এর পরেই আছে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এই রাজ্যের হার ৩৯.৭ শতাংশ। পরবর্তীতে যে রাজ্যগুলি আছে সেগুলি হল সিকিম ৩৯.২, পুদুচুরি ৩১.৮ তেলেঙ্গনা ২৬.৯ এবং কেরালা ২৬.৯ শতাংশ।জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে মূলত পারিবারিক এবং সামাজিক সমস্যা থেকে। এছাড়াও মানসিক অসুস্থতার কথাও রিপোর্টে বলা হয়েছে। ২০২১ সালে স্ত্রী-পুরুষ আত্মহত্যার হার ছিল এই রকম।পুরুষ ৬৪ শতাংশ, মহিলা ৩৫ শতাংশ। ২০২২ সালে পুরুষ ৬৬ শতাংশ এবং মহিলা ৩২ শতাংশ। দুটি বছরে শিশু বা কিশোর আত্মহত্যার হার ছিল ১ শতাংশ। বয়সের অনুপাত যথাক্রমে ১৬ বছরের নীচে ১ শতাংশ (দু’বছরে)। ১৬-৩০ বছরের হার ২০২১ সালে ছিল ৫২ শতাংশ, ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৬৫ শতাংশ। ৩০-৪৫ বছর বয়স যাদের তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ২০২১ সালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।ওই বয়সীদের ২৫ শতাংশ ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছে। ৪৫ বছরের বেশী বয়সীদের আত্মহত্যার হার তুলনামূলক ভাবে কম। ২০২১ সালে ছিল ১৮ শতাংশ, ২০২২ সালে কমে হয় মাত্র ৫ শতাংশ। বয়স জানা যায়নি এমন ক্ষেত্রের হার ৪ শতাংশ।১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার যথাক্রমে ৩৪.৫ শতাংশ এবং ৩১.৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ ছাত্র। ১৩,০৩৯ ছাত্রের মৃত্যুর বিতর্কিত কারন আত্মহত্যা। দেশের উৎপাদনশীল জনসংখ্যার এই হারে মৃত্যু রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
সাধারণ ক্ষেত্রে মহিলাদের আত্মহত্যার মূল কারণ পারিবারিক গণ্ডগোল বা বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়। রিপোর্টে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, পণপ্রথার প্রসঙ্গ। পেশাদার মহিলা বা গার্হস্থ মহিলারাও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।অত্যন্ত বিতর্কিত সামাজিক এই বিষয়টা ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের কারনে ঘটে থাকে।একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে দাঁড়িয়ে পশ্চিমের তুলনায় প্রাচ্যে এই সমস্যা নজরে পড়ার মত বেশি।
Comments
Post a Comment