ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে সুভাষের মূর্তি ও ট্যাবলো রাজনীতি!








দীপেন্দু চৌধুরী  

বিতর্কটা শেষ পর্যন্ত থেকেই গেল এবং ভবিষ্যতেও হয়ত থেকে যাবে। হ্যা, আমি সুভাষচন্দ্র বসুর ট্যাবলো বিতর্কের কথা বলতে চাইছি।লেখাটা যেদিন শেষ করছি ঠিক তখনই লোকনায়ক সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে নতুন আঙ্গিকে আরও একটা বিতর্ক সামনে এল। দিল্লির প্রাণকেন্দ্র ইন্ডিয়া গেটে সুভাষচন্দ্রের মূর্তি বসানোর কথা ঘোষণা করলেন, সঙ্ঘ পরিবারের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সারা বিশ্বের সুভাষপ্রেমী বাঙালি তথা ভারতীয়দের আহত আবেগে প্রলেপ দিতে চাইলেন সুচতুর হিন্দু হ্রদয়সম্রাট নরেন্দ্র মোদী।আমাদের লেখার বিষয় ছিল মূলত প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লির কুচকাওয়াজ থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া রাজ্যের সুভাষচন্দ্রের ট্যাবলো বাতিল নিয়ে।এই প্রসঙ্গটা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেন্দ্রের ট্যাবলো রাজনীতি হিসেবেই সংঞ্জায়িত করেছেন।কংগ্রেস সহ বিরোধীরা অভিযোগে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিকটবর্তী অঞ্চলে সুভাষ চন্দ্র বসুর বিরাট এক মূর্তি রয়েছে। সাত বছরে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কতবার শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন?

২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই ঘোষণা, সাম্প্রতিক অতীতের সুভাষচন্দ্রের জীবনী সম্বলিত  ট্যাবলো বিতর্ককে আড়াল করতেই কী তড়িঘড়ি এই ঘোষণা? ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সাত মাস আগে দেশে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে।করোনা বাধ্যবাধকতার কারণে বিদেশী অতিথিরা আসছেন না। সেই আবহেই নেতাজির ট্যাবলো বাতিল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়ছিল।আন্তর্জাতিক স্তরেও সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছিল।কেন্দ্রের সরকার একরকম ব্যাকফুটে চলে যায়। এমতবস্থায় নাগপুরের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সবাইকে চমকে দিয়ে বিকাশপুরুষ তথা হিন্দুহ্রদয়সম্রাট মোদীকে সামনে রেখে এই ঘোষণা করালেন, সমালোচকদের ব্যখ্যায় উঠে আসছে এমন যুক্তি।  

মোদী সরকার আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১-র যুদ্ধ জয়ের পরে কংগ্রেস দলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধির সরকার ইন্ডিয়া গেটের নীচে অমর জওয়ান জ্যোতি তৈরি করেছিলেন। গত পঞ্চাশ বছরের পরিচিত দৃশ্যটা হঠাতই পালটে গেল সেদিন! মোদী সরকার আচমকাই তা নিভিয়ে দিয়েছে।নিরন্তর জ্বলতে থাকা ওই ইন্ডিয়া গেট থেকে অল্প দূরে জতীয় যুদ্ধ স্মারক বা ন্যাশন্যাল ওয়ার মেমোরিয়ালের জ্যোতি বা অগ্নি শিখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।মোদী সরকারের আমলে তৈরি হয়েছে, ন্যশন্যাল ওয়ার মেমোরিয়াল। অভিযোগ উঠে এসেছে, ২০১৪ সালের আগের যাবতীয় স্মৃতি মোদী সরকারের আমলে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তে চতুর্দিক থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক শিবির তোপ দেগেছেন। কেউই মেনে নিতে পারছেন না হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্ত।            

মোদী সরকার পশ্চিমবঙ্গের সুভাষ ট্যাবলো বিতর্ককে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিবির আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।বর্তমান অস্থির ভারতে রাষ্ট্রীয়স্তরে সুভাষচন্দ্রের আদর্শকে আমরা কতটা লালন করতে পারছি? বা কতটুকুই বা বেঁচে আছে সেই আদর্শের সংস্কৃতি?প্রশ্নটা বর্তমান সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সুভাষচন্দ্রের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে একটি ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার সিরিজের শেষপর্বেও প্রশ্নটা আবারও চাগিয়ে দিলেন সুভাষকন্যা অনিতা বসু পাফ। ১৬ জানুয়ারি ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় অনিতা বললেন, ‘’ভারতে সম্প্রীতিতে ফাটল ধরানো শক্তির উত্থানের দিনকালে বিশেষ প্রাসঙ্গিক নেতাজির জীবন।নেতাজি বা আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা ভাবলে বলতেই হয়, আগামীর ভারত বিষয়ে অন্য রূপরেখা ছিল তাঁদের চোখে।‘’

সুভাষের ভাতুষ্পুত্র ইতিহাসবিদ সুগত বসু, ‘অনিতা ডায়লগস’ শিরোনামের ধারাবাহিক এই ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় এদিন প্রধান অতিথি ছিলেন। ১৬ জানুয়ারির ‘অনিতা ডায়ালগস’ ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় সুভাষ বিষয়ে যে বক্তব্য তিনি বলেছেন, তার সমর্থনে এর আগেও অধ্যাপক সুগত বসুর লেখায় আমরা এই বিষয়ে পড়েছি।২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি বাংলা দৈনিকের নিবন্ধে সুগত লিখছেন, ‘গাঁধিজি যখন আইএনএ বন্দিদের দেখতে লালকেল্লায় গিয়েছিলেন, বন্দিরা তাঁকে বলেন, আইএনএ-র মধ্যে তাঁরা কখনও ধর্ম-বর্ণ-জাত পার্থক্য বোধ করেননি।‘’কিন্তু এখানে দেখছি আমাদের হিন্দু চা, মুসলিম চা দেওয়া হচ্ছে,’’ তাঁদের অভিযোগ। গাঁধির প্রশ্ন ‘’আপনারা মেনে নিচ্ছেন কেন? তাঁদের উত্তর, ‘’না মানছি না।‘হিন্দু চা’ আর ‘মুসলিম চা’ নিয়ে আমরা অর্ধেক অর্ধেক মিশিয়ে নিচ্ছি, তারপর সবাইকে ঢেলে দিচ্ছি।‘’ ‘’দারুণ’’ গাঁধির সহাস্য প্রতিক্রিয়া।

কেন্দ্রের নেতাজি ট্যাবলো খারিজ করে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএমও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপে তিনি ‘স্তম্ভিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধও জানিয়েছেন। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী সাফ সাফ ভাবে লিখেছেন, ‘’স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে যারা অবঞ্জা ও অবহেলা করে, জাতি তাদের কখনও ক্ষমা করে না।‘’ ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী চলতি বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুভাষ সম্পর্কিত যাবতীয় নথিপত্র প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন। ট্যাবলো বিষয়ক সিদ্ধান্ত কেন্দ্র পুনর্বিবেচনাতো করেইনি উল্টে সঙ্ঘ পরিবারের রাজনীতিকেই প্রশ্রয় দিয়েছে।

২০১৫ সালে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের নেতাজি সংক্রান্ত দু’টি গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আসে। সেই ফাইল দুটি থেকে জানা যায়, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত নেতাজির পরিবারের উপর নিয়মিত নজরদারি করা হয়েছিল। বিষয়টা সামনে আসায় সবথেকে অস্বস্তিতে পড়েছিল কংগ্রেস। কারণ আলোচ্য দু’টি দশকে কেন্দ্রে সরকার ছিল কংগ্রেসের। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খোদ জওহরলাল।নেতাজি ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ভোটের ‘ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি।কারণ দু’বছর পরে ২০১৭ সালে ছিল উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন।বিদেশ মন্ত্রকে ২৯টি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ৫৮টি নেতাজি বিষয়ক গোপন ফাইল ছিল।এই ফাইলগুলি প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন নেতাজির পরিবারের সদস্যরা। সেই ফাইল আর প্রকাশ করা হয়নি।মহাফেজখানা থেকে দু’টি ফাইল সামনে এনে কংগ্রেস বিরোধী  রাজনীতিটা খুঁচিয়ে তোলা হয়েছিল সে বছর।ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই পদ্মশিবিরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।     বাকী ফাইলগুলি আমলাতান্ত্রিক কৌশলে ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার।  

নেতাজিকে নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে ২০১৫ সালেই কংগ্রেস থেকে বলা হয়েছিল। কারণ সেই বছর থেকেই কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধি নতুন করে দলকে চাঙ্গা করার জন্য পথে নেমেছিলেন।কংগ্রেস থেকে আরও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, নেহরু মন্ত্রিসভার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলকে নিয়ে।আসলে এই ঘটনায় বিজেপির দ্বৈত সত্তার প্রকাশ জ্বল জ্বল করে ওঠে।গাঁধি-নেহরু পরিবারকে আক্রমণ করতে নেমে স্ববিরোধিতায় জড়িয়ে পড়ে নাগপুরের স্নেহভাজন বিজেপি নেতৃত্ব।সেই বছরেই মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধীতা করে সনিয়ার নেতৃত্বে পথে নামে কংগ্রেস।নেতাজিকে নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে ২০১৫ সালেই কংগ্রেস থেকে বলা হয়েছিল। কারণ সেই বছর থেকেই কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধি নতুন করে দলকে চাঙ্গা করার জন্য পথে নেমেছিলেন।কংগ্রেস থেকে আরও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, নেহরু মন্ত্রীসভার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলকে নিয়ে।

নেহরু জমানায় প্রথম তিনটি বছর অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত পটেল ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।পটেলের সুবিশাল মূর্তি তৈরি করিয়েছেন মোদী, অমিত শাহেরা।নেহরু জমানায় আইবি-র নজরদারি কি পটেলের অগোচরে হয়েছিল? এআইসিসির এক শীর্ষ নেতা প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘’বিজেপি পটেলের দিকেও আঙুল তুলছে কিনা তা স্পষ্ট করা উচিত মোদীর।‘’ আসলে এই ঘটনায় বিজেপির দ্বৈত সত্তার প্রকাশ জ্বল জ্বল করে ওঠে।গাঁধি-নেহরু পরিবারকে আক্রমণ করতে নেমে স্ববিরোধিতায় জড়িয়ে পড়ে নাগপুরের স্নেহভাজন বিজেপি নেতৃত্ব।সেই বছরেই মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধীতা করে সনিয়ার নেতৃত্বে পথে নামে কংগ্রেস।২০১৫ থেকে ২০২১ এক টানা আন্দোলন। ভারতের কৃষক আন্দোলন আজ ইতিহাস।৭০০ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে এই আন্দোলনে তবু আন্দোলনকারীদের প্রত্যয় ছিল অভঙ্গুর। দিল্লি সীমান্তে টানা এক বছর ধর্না করে সংযুক্ত কিষান মোর্চা কৃষক বিরোধী সরকারকে বাধ্য করেছে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল করতে।আসলে নেতাজিকে সাধু হিসাবে তুলে ধরে হিন্দু ভোট ঘরে তুলতে চেয়েছিল বিজেপি।কংগ্রেসের কথায় একই রাজনীতির পুনরাবৃত্তি।

প্রাক্তন আমলা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘’বিজেপি নেতাজিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়। তারা ভুলে যায় যে, উনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ছিলেন।কংগ্রেসের সঙ্গে সুভাষের বিরোধ ছিল মানেই যেন নেতাজি বিজেপির হয়ে গিয়েছেন।’’ ভোট চিত্রনাট্য তৈরিই ছিল।এই বছর উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, গোয়া, পঞ্জাব সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট।গোয়ার ভোট রাজনীতির কথা মাথায় রেখে মাদার টেরিজার প্রতিষ্ঠিত ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’-কে বিদেশি অনুদান পাওয়ার আইনি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

পাঁচ রাজ্যের ভোটের কথা মাথা রেখে ইন্ডিয়া গেটে মূর্তি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত আরও একটা রাজনৈতিক বিতর্ককে উসকে দিতে চাইছে, নেহরু-গাঁধি পরিবার বিরোধী বিজেপি নেতৃত্ব।কারণ ২০২৪ সালের সেন্ট্রাল ভিস্টার নতুন মসনদে বসতে গেল লখনউয়ের মসনদ দখলে রাখাটাও আবশ্যিক রাজনীতি।জাতপাত, সংখ্যালঘু, দলিত নিগ্রহ ও বেকারত্ব নিয়ে যোগী সরকার অত্যন্ত আতান্তরে পড়েছে। পাশাপাশি আছে ভারতের কিসান আন্দোলনের চাপ। লখিমপুরের ঘটনা গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে পদ্মশিবিরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। লোকাসভার ৫৪৩ জন সদস্যের মধ্যে ৮০ জন সাংসদ সঙ্ঘ পরিবারের রামরাজ্য থেকে সংসদে যায়।রাজ্যসভার ২৪৫ জন সাংসদের মধে ৩১ জন সাংসদ রাজ্যসভায় যায় এই রাজ্য থেকেই।সম্প্রতি তিন দলিত মন্ত্রী ও ১৩ জন বিধায়ক নাগপুরের দত্তকপুত্র যোগী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। হঠাত করে এসে পড়া এই উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলানোটাও মোদী-অমিত শাহদের কাছে এখন প্রধান রাজনৈতিক-সামাজিক কৌশল।

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামো বদলে দিতে চাইছে সঙ্ঘপরিবারের আদর্শ অনুপ্রাণিত বিজেপি দলটি। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের রাজনীতির প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তাঁরা। আমাদের অভিঞ্জতা থেকে দেখতে পাচ্ছি, যাঁরা দেশ শাসনের দায়িত্বে আছেন, তাঁরা সংখ্যালঘু সমাজকে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, তাঁদের পছন্দের জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যাক, ১৯৪৮ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদ বা কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে ভারতের সংবিধানের খসড়া পেশ করার সময় ডঃ অম্বেডকরের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রসঙ্গের সতর্কতা। তিনি বলেছিলেন, ‘’সংখ্যালঘুদের মধ্যে যাতে কোনও অবিচারজনিত বিপন্নতার বোধ তৈরি না হয়, সেটা দেখা যে সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব, সেটা সংখ্যা গুরুকেই বুঝতে হবে।‘’

গণতন্ত্রের ভাষা আমরা নতুন করে চিনে নিতে পারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে।১৯৩৯ সালের ১৯ অগস্ট কলকাতায় মহাজাতি সদনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসে ‘মহাজাতি’ বলতে তিনি ঠিক কি বোঝেন, সেই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘’জাগ্রত চিত্তকে আহ্বান করি, যার সংস্কারমুক্ত উদার আতিথ্যে মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ মুক্তি অকৃত্রিম সত্যতা লাভ করে…………’’। সেদিন একই মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র আর বাঙালির অভিভাবক রবীন্দ্রনাথ। একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য তৈরি করার কথা লেখা আছে আমাদের সংবিধানে।নেতাজি গবেষকরা বলছেন, নেতাজি নিজেও এই কথা বলে গিয়েছেন। ১৯২৮ সালে মহারাষ্ট্র প্রাদেশিক কনফারেন্সে ভারতের জাতীয়তাবাদীদের সতর্ক করে নেতাজি বলেছিলেন, ‘’তাঁদের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের পথে প্রধান কাঁটা, মৌলবাদী ধর্মান্ধতা। এই ধর্মান্ধতা কাটানোর একটাই পথ ধর্মনিরপেক্ষ ও বিঞ্জানভিত্তিক শিক্ষার প্রসার।‘’                                                                                                                                 

 

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?