উন্মেচিত হোক ব্যাক্তি স্বাধীনতার শৈশবঃ
দীপেন্দু চৌধুরী
যখন মনে পড়ে আমার
শৈশব, আমার কৈশোর, আমার যৌবন। এই পরিত্যাক্ত আত্মীয়-স্বজনহীন, নির্বান্ধব- বন্ধুহীন
জীবনে শুধু আত্মীয়-খুঁজি, বন্ধু খুঁজি।পথভোলা পথিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে জাগে।
সমাজ খুঁজি। এই বাংলায় ছদ্ম আদর্শের মৌলতন্ত্রের অভিভাবকরা স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল
স্বাধীন ভারতের অসংখ্য শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের। অসংখ্য সৃষ্টিশীল ব্যক্তি,
গণ-নাট্যআন্দোলনের, স্বাধীনতা আন্দোলনের ঋত্বিকরা মুক্তির পথ খুঁজেছেন। স্বাধীনতার
আলো খুঁজেছেন অসহায়ের মতো। দু‘একটা নাম উচ্চারণ করা যাক।জর্জ দা। দেবব্রত বিশ্বাস।
থেকে গেলেন। তিনি আজও আছেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের ধ্রুবতারা হয়ে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তার
গানে তাকে আমরা আমাদের হ্রদয়ের ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে’ ভাষায় খুঁজছি।ঋত্বিক
ঘটক।কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। মায় রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ কেউ
তথাকথিত সমাজপ্রভুদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাননি। তারা মুঠো মুঠো স্বাধীনতা নিয়ে
আমার বাঙলায়, আমার ভারতে, আমাদের বিশ্বে চিরায়ত এবং আন্তর্জাতিক। তারাই আমাদের পথ চেনাচ্ছেন।সাহস
যোগাচ্ছেন। অপপ্রচারকে চিনতে শেখাচ্ছেন। লোকায়ত বাংলাকে জানতে বলছেন। পথ দেখাচ্ছেন
গুরু নানক, লালন ফকির, কবির।সুফি সংস্কৃতির উদার মিলন উৎসবের আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছেন
তারা।
শিল্পের মূর্ছনা
শিল্পকে, শিল্পীকে স্বাধীনতা দেয়। বৃহৎ অধ্যায়ের আকাশ স্পর্শ করার অধিকার এনে দেয়।
আমি স্বাধীনতা চাই। ‘আমাকে মারবে? মেরে দাও’। সম্প্রতি বলেছেন মানুষের সাংবাদিক, প্রতিবাদের
কন্ঠস্বর, গণতন্ত্রের আদর্শ পথিক সাংবাদিক রবীশ কুমার। আমিও বলছি, প্রায় চার চারটে
দশকের কিছু বেশি সময় স্বাধীনতা খুঁজেছি। ব্ল্যাকমেল করে অসামাজিক করে দেবে? এক ঘরে
করে রাখবে? মৌলবী সংস্কৃতির কোনও জাত হয় না। ধর্ম হয় না। দল হয় না। আদর্শ হয় না।আঙ্গুলের
মুদ্রায় যারা অশ্লীল জীবনে আহ্বান জানায় সমাজে তাদের স্বীকৃতি আছে। আপনাদের প্রশ্রয়ে?
কাউকে টাইট দেওয়ার ঔদ্ধত্যে? মৌমাছির চক্রের সংস্কৃতির এমনই মহিমা আপনাদের আধিপত্যের
সামাজিকতায়! তাদের বৃহত্তর সমাজে স্বীকৃতি
দেওয়া হয়। আমাকে পাগল করবে? করে দাও। আমাকে মেরে দেবে? মেরে দাও। আমার যৌবনের অনুভূতি,
আমার প্রেম হারিয়ে গেছে। ব্যঙ্গ করবে? বিদ্রুপ করবে? সব কিছু হারিয়েও আমি আমার মতো
থাকব। আমার স্বাধীনতায় তোমাকে মৌলবী কতৃত্ব করতে দেব না।তুমি যে জাতের বা যে ধর্মের
হও না। আগে আমি আমার বাংলার ‘জয় হোক’ বলব। তারপর অখন্ড ভারতের জয় হোক বলার অধিকারের
জন্য পরিসর খুঁজে নেব। আমি হোলটাইমার হব না। আমি সমান্তরাল কালো অর্থনীতির কাছে আত্মসমর্পণ
করব না। আমার সীমাবদ্ধতায়, আমাদের উপলব্ধিতে স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে এই আমার অঙ্গিকার।
আমরা মতোই প্রৌঢ়
জীবনে এসে আত্মীয় খুঁজেছিলেন প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র। তার স্ত্রী প্রখ্যাত
নাট্য ব্যক্তিত্ব তৃপ্তি মিত্র। তৃপ্তি মিত্র
লিখছেন, ‘’যে আবহাওয়ায় মানুষ হচ্ছি তাতে দেশের জন্য একটা কিছু কাজ আমাকে করতেই হবে,
কিশোর মনের এ অস্থিরতা আমাকেও পেয়ে বসেছিল। তাই সমাজসেবী হব বা রাজনৈতিক কর্মী হব,
কলেজে মাস্টারি করব এ কল্পনা করেছি।, ডাক্তার হব এ কল্পনাও করেছি। কিন্তু অভিনেত্রী?
নৈব নৈব চ।‘’ নীল আকাশের পৃথিবী যেখানে কিশোর মনের অস্থিরতা নিয়ে পৌঁছলে স্বপ্নকে স্পর্শ
করা হবে। বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয় না। যে নাট্য মাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় তখনও অসম্পূর্ণ
তৃপ্তি মিত্রের। তিনি আরও লিখছেন, ‘’এটাও যে একটা কাজ হতে পারে এ চেতনা’’ তখনও আসেনি।
তবে তার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। ‘নবান্ন’ প্রথম মঞ্চাভিনয়-র সূত্র ধরে বাংলা
নাট্য ইতিহাস যেমন স্থায়ীভাবে নতুন পথে বাঁক নিল, তৃপ্তির জীবনেও এই ‘নবান্ন’ হয়ে উঠল
উঠল একটা স্তর। চৌরাস্তার মোড়ে এসে কোন পথিককে যেমন ঠিক করতে হয় যে সে কোন রাস্তা ধরবে।
তারপর তাকে সেই রাস্তায়ই চলতে হয়। ‘নবান্ন’
আমার সেই চৌরাস্তা। এই খানে এসে আমি ঠিক করলাম নাটক করাটাই আমার কর্তব্য।‘’ এই কর্তব্য
ঠিক হয়ে যাবার পর কোন দিকে ফিরে দেখেননি তৃপ্তি।
স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের, স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুলের, স্বাধীনতা তুমি জীবনান্দের, স্বাধীনতা তুমি
সত্যজিতের। স্বাধীনতা তুমি অখন্ড বাংলার। স্বাধীনতা তুমি অখন্ড ভারতের।উন্মোচিত হোক
ব্যক্তি স্বাধীনতার ৭৫তম বছরের শৈশব, কৈশোর, যৌবন।প্রৌঢ়ত্বের স্বাধীনতা। ভারতের স্বাধীনতার
হীরক জয়ন্তিতে (৭৫তম বছরে) উচ্চারিত হোক ‘বন্দে মাতরম’, জয় হিন্দ, জয় বাংলা। উন্মুক্ত
হোক মানুষের অধিকার অতিমারিকে জয় করে। দারিদ্রকে জয় করে।আসুন আমরা আজ শপথ গ্রহণ করি
স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব। গণতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষতা, জনগণের ঐক্য, চিরায়ত সংস্কৃতি ও
সম্প্রীতি রক্ষার।
Comments
Post a Comment