সংযুক্ত মোর্চার ইস্তাহারঃ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আবেদন
দীপেন্দু চৌধুরী
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে
বামেদের সম্পর্কে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করলেন, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান
বসু। ২৪ মার্চ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে জোট সঙ্গী কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট
(আইএসএফ) এবং বামফ্রন্ট নেতাদের পাশে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার তরফে যৌথ আবেদন প্রকাশ
করেছেন বিমান বসু। আবেদনে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার,
ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সরকার গড়তে সংযুক্ত মোর্চাকে জয়ী
করুন।’
বামেদের ভোট দিয়ে লাভ নেই, তারা জিততে পারবে না! গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই
বামেদের সম্পর্কে এই প্রচার চালানো হচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায় এবং
সোশ্যাল মিডিয়ায়। বামদের সম্পর্কে এই প্রচার চালাচ্ছে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া টিম
এবং শীর্ষ নেতৃত্ব। সুপরিকল্পিতভাবে এই ধরণের প্রচার করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের
লোকাসভা নির্বাচনের সময় থেকে বামেদের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রচার করছে বলে দাবি করে
বিমান বসু বলেছেন, ‘’বামেদের ভোট দিয়ে কী হবে, তারা জিততে পারবে না- এই প্রচার গত
লোকসভা ভোটের সময় থেকে শুরু হয়েছে। ‘আগে রাম, পরে বাম’- এমন প্রচারও চালানো হচ্ছে।
এর কোনটারই বাস্তব ভিত্তি নেই। মূলত বিজেপির আইটি সেলের কাজ এই ধরণের
প্রচার করা।‘’
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেছেন, কেন্দ্রে মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিতে
শ্রমিক-কৃষক সহ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দেশ জুড়ে ভয়াবহ কর্মহীনতা
ও দরিদ্র বাড়ছে, অথচ করোনা মহামারীর মধ্যেও সরকারের দাক্ষিণ্যে কর্পোরেট
সংস্থাগুলির সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। বিজেপির শাসন ব্যবস্থায়
সংখ্যালঘুদের অধিকার আক্রান্ত। সাম্প্রদায়িকতার বিষ প্রসারিত হচ্ছে। তাছাড়াও তৃণমূল
এবং বিজেপি বোঝাপড়া করে সাম্প্রদায়িক কার্ড ব্যবহার করছে। সংযুক্ত মোর্চার আবেদনে
বলা হয়েছে, কখনও তৃণমূল বলছে, বামেদের দিয়ে ভোট ‘নষ্ট’ না করে তাদের সমর্থন করাই
ভালো। বিমানের বক্তব্য, ‘’মানুষকে বিভ্রান্ত করাতে এই ধরণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু
সত্যটা সত্যই থাকে, মিথ্যা সত্য হয় না!’’
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর আরও বক্তব্য বিজেপি ও তৃণমূল দু’ই দলের
এই অপপ্রচারের মোকাবিলা করেই বামেরা বাংলার ভোট ময়দানে আছেন এবং লড়াই করছেন।
ভোটারদের সমর্থন পেলেই কোনও দল সরকার গড়তে পারে। আগে থেকেই ‘জিততে পারবে না’-র
ধারণা তৈরি করা হচ্ছে কখনও বিজেপি, কখনও তৃণমূলের সুবিধার জন্য। বিমানবাবু আক্রমণ
করেন বিজেপিকে। রাজ্যের মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, মানুষ ভোট দিলেই বাম-সহ
গণতান্ত্রিক শক্তি জিতবে এবং বিজেপি-তৃণমূলের বিকল্প সংযুক্ত মোর্চার সরকার তৈরি
হবে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিমানবাবু প্রকারন্তরে মেনে নিয়েছেন, লোকসভা ভোটে
বামেদের পুরনো ভোটের বড় অংশই বিজেপিতে গিয়েছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, বামেরা
সামাজিক মাধ্যমে যথেষ্ট সক্রিয়। তবুও তারা কেন বিজেপির সুসংগঠিত আই টি সেলের
মোকাবিলা করতে পারছে না? বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান উত্তরে বলেন, ‘’সব জবাব কি সামাজিক
মাধ্যম দিয়ে হয়? মাঠে ময়দানে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী এবং কর্মীরা বলছেন, কেন
বিজেপিকে রুখতে হবে, কেন তৃণমূলকে পরাস্ত করতে হবে। বাসে- ট্রেনে-নৌকায় নানা রকম
পদ্ধতিতে প্রচার চলছে। সেগুলো তো শুনতে হবে।‘’
রাজ্যের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবীত করে
রাজ্যের বেকারদের জন্য কাজের ক্ষেত্রের পরিসর নতুন করে তৈরি করার দায়িত্ব নিচ্ছে
সংযুক্ত মোর্চা। তৃণমূল এবং বিজেপির কথার খেলায় বিভ্রান্ত না হয়ে মোর্চার
প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য আহ্বান জানান হয় এদিন মোর্চার তরফে। এর আগে বামফ্রন্ট
এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন মোর্চার
আবেদনে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করা, দুর্নীতিমুক্ত
সরকার গড়তে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকার যে কাজ
করছে, তাতে মানুষের জীবন জীবীকা সমস্যায় জর্জরিত। এর থেকে মুক্তি দিতেই বিকল্প পথে
এগতে হবে এমন কর্মসূচীর ঘোষণা আগেই করেছে, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস তাদের দলীয়
ইস্তেহারে। সেই লক্ষ এক রেখেই সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে যৌথ আবেদনটি প্রকাশ করা
হয়েছে। এই আবেদনপত্রে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কথা
উল্লেখ করে সমাজের সব অংশের মানুষের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে বিকল্প
কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এদিনের আবেদনে ২৭ দফার বিকল্প কর্মসূচীর ঘোষণা করা
হয়েছে।
বিজেপি বাংলায় সিএএ বা নতুন নাগরিকত্ব আইন চালু করবে একথা বলে ভোট চাইছে,
উল্টোদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী সিএএ রোখার জন্য ভোটারদের কাছে আবেদন
করছেন। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেছেন, উনি পায়ে
ব্যান্ডেজ করে এখন অনেক কথা বলছেন। সিএএ এবং এনআরসি ওঁর দ্বারা রোখা সম্ভব নয়। বাম
ও সহযোগী, কংগ্রেস এবং আইএসএফ মিলিতভাবে সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়েই সিএএ- এনআরসি
রূখবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, মোদী-অমিত শাহ এরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে এসে সিএএ
লাগু করার কথা বলছেন, অসমে কেন অন্য কথা বলছেন? উত্তরে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ
প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে সেখানে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে
আলোচনার সময়ে তৃণমূলের ভূমিকা তিনি দেখেছেন। সেদিন যদি তৃণমূল বিরোধীদের সঙ্গে
সহযোগিতা করত, তাহলে এই আইন গৃহীত হতো না। কোনও যুক্তি নেই, সিএএ কার্যকর হতে পারে
না। সিএএ করা গেলে আসামে ডিটেনসন ক্যাম্পে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে কেন? অহেতুক এই
নিয়ে মমতা ব্যনার্জী এবং অমিত শাহ ভোটের জন্য ঝগড়া দেখানোর চেষ্টা করছেন।
আইএসএফ কোনও মৌলবাদী ধর্মীয় দল কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সদ্য আইএসএফে
যোগ দেওয়া লেখক সৌমিত্র ঘোষদস্তিদার বলেছেন, ‘’বহু জনের রাজনীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা
আমাদের নীতি। আমরা সেই নীতিতে অনড় থাকব।‘’ এদিন সংযুক্ত মোর্চার আবেদনপত্র
প্রকাশের সময় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিমান বসু, সিপিআইএমের রাজ্য
সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও সাসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য,
সিপিআই-র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপির সাধারণ সম্পাদক মনোজ
ভট্টাচার্য, ফরোয়ার্ড ব্লকেরর নেতা হাফিজ আলম সইরানি, আইএসএফ নেতা সৌমিত্র
ঘোষদস্তিদার।
Comments
Post a Comment