রাজ্যে প্রাথী তালিকা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের নাজেহাল অবস্থা







 

দীপেন্দু চৌধুরী

বলয়ের পার্থক্য নির্বাচন আসতেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মূহু মূহু ক্ষোভ আর বিক্ষোভের চাপে প্রার্থী তালিকায় বদল। ‘গো-বলয়’-য়ের মত অঞ্চলে বিজেপি নামক রেজিমেন্টেড দল যে কাজ সহজে হাসিল করতে পারে। পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও যতটা সহজে, ছলে বলে কৌশলে এবং ‘হিন্দুত্ব বলে’ নিজেদের আধিপত্য অতীতে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ‘বাংলা বলয়’-এ সেটা হচ্ছে না। বিধানসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই পার্থক্য বুঝতে পারছে বিজেপির ভোট কুশলী রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

প্রার্থী তালিকায় একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা ‘দলবদলু’-দের প্রার্থী হিসেবে নাম রয়েছে। পাশাপাশি কিছু ‘নব্য বিজেপি’-দের নাম প্রার্থী তালিকায় দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কয়েকজন বাংলা চলচ্চিত্রের তারকা প্রার্থীও আছে। এই ধরণের প্রার্থীদের বাছাই নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিজেপি দলে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে মুকুল রায় সদলবলে বিজেপিতে যোগদান করেন। বিজেপি নামক দলটি পশ্চিমবঙ্গে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সম্প্রতি এক ‘দাদা’ নিজের অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূল থেকে বিজেপি দলে যোগ দেওয়ার পরে।

তারপর থেকে সংগঠন যেমন বাড়ছিল, ঠিক তেমনি ক্ষোভও জমছিল মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংগঠন গড়ে তোলা নেতাকর্মীদের মধ্যে। যার বহিঃপ্রকাশ আছড়ে পড়ল ১৬ মার্চ। বিজেপির হেস্টিংস অফিসের সামনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিজেপি নামক একটি সংগঠিত সর্বভারতীয় দলে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, সেটা এই দলের কাছে আশা করা যায় না। ক্ষোভ, বিক্ষোভ অসন্তোষের বিষয়টা নিয়ে বিরক্ত বেজেপি শীর্ষ নেতা তথা কেদ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও। প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন বিক্ষোভের খবর আসছে। কলকাতাতেও বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ বাড়ছে। ১৫ মার্চ নিউ টাউনের একটি হোটেলে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন শাহ। সেই বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কী হচ্ছেটা কী? এত বিক্ষোভ কেন? একই সঙ্গে বিজেপির সভায় লোক না হওয়ার বিষয়েও জানতে চান তিনি।

নিউ টাউনের হোটেলের এই বৈঠকে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা, শাহ নিজে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ, সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ, রাজ্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রব্রতী এবং স্বপন দাশগুপ্ত। এই বৈঠকে নড্ডা এবং অমিত শাহ ক্ষোভের সম্পর্কে বিশদ জানতে চান। কোথায় কোন প্রার্থীকে নিয়ে কেন সমস্যা? রাজ্য নেতৃত্বের এই বিষয়ে আগাম ধারণা ছিল কি না, তা-ও তাঁরা বোঝার চেষ্টা করেন। বৈঠক চলে রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত। বিজেপি নামক দলের অন্দরের খবর, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দিনের পর দিন ধরে টানা দলীয় কর্মীরা বিক্ষোভ করে চলেছে। রাজ্য নেতৃত্ব কেন সেই বিক্ষোভ সামলাতে ব্যর্থ সেই প্রশ্ন তুলে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন দুই শীর্ষ নেতা অমিত শাহ এবং জে পি নড্ডা। ১৬ মার্চ দিল্লিতে সারাদিন ধরে দু’দফায় বৈঠক হয়।

শেষ চার দফার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে এ দিন দিল্লিতে জে পি নড্ডার বাড়িতে বেলা ১১ টা থেকে টানা সাত ঘণ্টা বৈঠক হয়। যদিও দিলিতে এদিনের সকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না অমিত শাহ। শাহের অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে বিজেপির নেতারা মুখ খুলতে চাননি। গত ১৩ মার্চ তৃতীয় ও চতুর্থ দফার তালিকা প্রকাশিত হতেই রাজ্য বিজেপিতে শুরু হয়ে যায় কোন্দল। কলকাতা সহ জেলার বহু জায়গাতেই অন্য দল থেকে সদ্য আসা নেতা বা চিত্র তারকাদের প্রার্থী করা মেনে নিতে চাননি পুরনো পোড় খাওয়া কর্মীরা। সেই কারণেই দলের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়।

কলকাতায় শাহের বৈঠকের পরেই শেষ চার দফার ১৭০ জন প্রার্থীর নাম ঠিক করতে নড্ডার বাড়িতে বৈঠকে বসেন, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাজ্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয় বর্গীয়রা। সকালে নড্ডার বাড়িতে বৈঠকের পরে বিজেপির সদর দফতরে হয় দ্বিতীয় বৈঠকটি। রাত সাড়ে আটটায় পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাহ। ১৬ মার্চের বৈঠকে কিছু রদবদল করে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলে বিজেপি। সূত্রের খবর, দল বুঝতে পারেছে, প্রার্থী তালিকা যা-ই হোক, বিক্ষোভ হবেই। তাই এক বার তালিকা প্রকাশ করে বিক্ষোভে জল ঢেলে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে নেতৃত্ব।          

একটি সুসংগঠিত দলের কতটা নাজেহাল অবস্থা হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ‘দলবদলু’ নীতি মেনে দেশের অন্যান্য রাজ্যে সফল হলেও বিজেপির ভোট কুশলী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় বিধানসভা ভোটে কতটা সফল হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।                            

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?