এবারের প্রজাতন্ত্র হোক কৃষক প্রজাতন্ত্র






 

দীপেন্দু চৌধুরী

প্রজাতন্ত্র দিসের দিন কৃষক সংগঠনের ডাকা ট্রাক্টর মিছিলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা কেন্দ্রকে প্রত্যাহার করে নিতে বলল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের আনা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে অবস্থান বিক্ষোভ করছে লক্ষাধিক কৃষক। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক নেতাদের দশ দফার বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্র চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায় কৃষক আন্দোলন তুলে দিতে। গত সপ্তাহের শুনানিতে আদালত তিন আইনে স্থগিতাদেশ জারি করে চার সদস্যের কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল। সেদিনই কৃষক নেতৃত্ব জানিয়ে দেয় তাঁরা এই কমিটির সঙ্গে কোনও বৈঠক করবে না। বা তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কোনওরকম আলোচনা করবে না। কারণ কমিটির চারজনই সরকারের প্রতিনিধি। প্রত্যেকেই কেন্দ্রের আনা তিন কৃষি বিলকে সমর্থন করেছে। এর পরেই কমিটির অন্যতম সদস্য ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (মান)-র নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ মান কমিটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

 কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বের একের পর এক কর্মসূচী ঘোষণায় কেন্দ্র রীতিমতো বিপাকে পড়ে যায়। ভারতের ‘গণতন্ত্র দিবস’ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ জানুয়ারি। ওই দিন আমরা ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে পালন করি। কৃষক নেতৃত্ব ঘোষণা করে তাঁরাও শান্তিপূর্ণভাবে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বা ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালন করবে,  ট্র্যাক্টর মিছিল করে। তাঁরা রাজপথে সরকারি উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী যে কুচকাওয়াজের আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হয় সেখানে কোনও বিঘ্ন ঘটাবেন না। কেন্দ্র আশঙ্কা করছে, দিল্লিতে একবার কৃষকরা ঢুকে গেলে আর ফিরে না গেলে পরবর্তী পরিস্থিতি কি হতে পারে। তাই ট্র্যাক্টর মিছিল আটকাতে দিল্লি পুলিশ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ সুপ্রম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল ২৬ জানুয়ারির ট্র্যাক্টর মিছিল বন্ধ করতে নিশেধাঞ্জা জারি করা হোক১৮ জানুয়ারির শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, দিল্লিতে কোনও ব্যক্তি অথবা সংগঠনকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি হবে না সে বিষয়ে পুলিশকেই সিধান্ত নিতে হবে। সেদিন প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে বলেন, ‘’আপনাদের কী করা উচিত, তা আমরা বলতে যাচ্ছি না।‘’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘’Police will be at liberty to invoke all powers under the laws.’’   ১৬, ১৭ এবং ১৯ জানুয়ারি কৃষক নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়, তাঁরা দিল্লির রিং রোডে ট্র্যাক্টর মিছিল করবেন। দিল্লি শহরের মূল কেন্দ্রস্থলে ঢুকবেন না। 

পরবর্তী শুনানি ছিল ২০ জানুয়ারি। এদিন সুপ্রিম কোর্ট ২৬ জানুয়ারি ট্র্যাক্টর মিছিল নিয়েও কোনও অবস্থান নেবে না বলে আজ ফের জানিয়ে দেয়। শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পরে দিল্লি পুলিশ ট্র্যাক্টর মিছিলে নিষেধাঞ্জার যে আর্জি জানিয়েছিল, সেই আর্জি তারা প্রত্যাহার করে নেয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ স্পষ্টতই জানিয়ে দেয় মিছিল নিয়ে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। কৃষক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্ব সাংবাদিক সম্মেলন করে আবারও জানিয়ে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার জন্য চার সদস্যের কমিটি করেছে। সেই কমিটি থেকে একজন পদত্যাগও করেছেন। আমরা প্রশাসনকে বলব, আমাদের পথ নির্দেশিকা বলে দাও। আমরা ‘গণতান্ত্রিক দিবস’ শান্তিপূর্ণভাবেই পালন করব। আউটার রিং রোডের ভেতরেই আমরা জাতীয় পতাকা এবং কৃষক সংগঠনের পতাকা নিয়ে প্যারেড করব। রিং রোড ৮০ কিলোমিটার লম্বা আছে। কোনও সমস্যা হবে না। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এই মিছিল আয়োজন করার অধিকার আমাদের আছে।

মোর্চা নেতৃত্ব আরও জানান, গত কয়েক মাস ধরে আমারা আন্দোলন করছি। প্রায় দু’মাস দিল্লি সীমান্তে বসে আছি। কেউ বলতে পারবে না আমরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছি। কোনও সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তি আমরা আক্রমণ করেছি? অথবা কোথাও ভাঙচুর করেছি। পঞ্জাব হরিয়ানা থেকে প্রায় দু’লাখ ট্র্যাক্টর আসবে। অন্যান্য রাজ্য থেকেও ট্র্যাক্টর আসবে। আন্দোলনের সমর্থনে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কৃষকরা দিল্লি পৌঁচেছেন। ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে যেমন ট্র্যাক্টর মিছিল হবে পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনের সামনে কৃষকরা ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালন করবে।

এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লি সহ সারা দেশে সরকার আইন শৃঙ্খলা কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করে। ওই অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে থেকে দিল্লি সহ দেশের স্পর্শকাতর জায়গায় খানা তল্লাশি হয়। সেক্ষেত্রে দু’লাখ-আড়াই লাখ ট্র্যাক্টর নিয়ে মিছিল করলে আইন শৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হবে না? উত্তরে কৃষক সংগঠনের নেতৃত্ব বলে, আমরা দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে প্রায় দু’মাস ট্র্যাক্টর নিয়েই বসে আছি। সরকারের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গিয়েছি? আমাদের ছেলেরা সেনাবাহীনীতে আছে। আমাদের প্রজন্মের অনেকে ছিল। তাই প্যারেড কিভাবে করতে হয় আমরাও জানি। ২৬ জানুয়ারি সুশৃঙ্খল ‘ট্র্যাক্টর মিছিল’ দেখবে দেসবাসী। যদি ‘গোদী মিডিয়া’ লাইভ সম্প্রচার করে

কলকাতায় মুখ খুলেছেন সিপিএম নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, সমস্ত অংশের মানুষের মিছিল প্রজাতন্ত্রকে গর্বিত করবে। সরকারি উদ্যোগে মিছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। আসুন আমরা সবাই মিলে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের গৌরব বৃদ্ধি করি। কৃষক মিছিলে অংশগ্রহণ করি। এবারের প্রজাতন্ত্র হোক কৃষক প্রজাতন্ত্র

প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে উল্লেখ করতে হচ্ছে, তিন কৃষি আইন স্থগিতে রাজি আছে কেন্দ্র। ২০ জানুয়ারি কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর জানিয়েছেন, সরকার এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত তিন কৃষি আইন স্থগিত রাখতে তৈরি আছে। কৃষক নেতারা সম্মতি জানালে, শুধু মৌখিকভাবে নয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামাও দেবে। সরকারের পিছু হটা দেখে নিজদের দাবিতে অনড় থাকা কৃষক নেতৃত্ব কি অবস্থান নেবেন এই প্রশ্নে তাঁরা জানিয়েছিলেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ২২ জানুয়ারি সরকারের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। তাঁরা জানিয়েছেন,  কৃষক নেতৃত্ব নিজদের মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্তে এসেছেন তিন কালা কানুন প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন প্রত্যাহার করার কোনও প্রশ্নই নেই।   

প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর মিছিলের কর্মসূচীও পালিত হবে। কৃষি ভারত মাথা উঁচু রেখে বলতে পারবে কর্পোরেট পুঁজির কাছে আমরা মাথা নিচু করিনি কোনওদিন করব না।                                  

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?