নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা





দীপেন্দু চৌধুরী

উচ্চ প্রাথিমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতর গত সাত-আট বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টের সমালোচনা শুনছে। সম্প্রতি আবারও একটি মামলায় ধাক্কা খেয়েছে। সেই আবহের মধ্যেই একগুচ্ছ দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামল প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রশাসনিক বদলির নামে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অন্যায়ভাবে বদলি বন্ধ করা, করোনা যোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া, শিক্ষা বহির্ভূত কাজে নিযুক্ত রাখা, প্রশাসনিক বদলির নামে শাস্তি বন্ধ করা সহ একাধিক দাবিতে রাজ্যের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা রাস্তায় নেমে সম্প্রতি অবস্থান বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানাল। ১০ ডিসেম্বর স্টেট ফোরাম অব হেডমাস্টার-হেডমিস্ট্রেসেস সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ৫০০ জন সদস্য বিক্ষোভ দেখায়। ১০ ডিস্মেবরের বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচীতে রাজ্যের ২৩ টি জেলার প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা অংশগ্রহণ করে। রাজ্যে এই প্রথম স্কুল এবং মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষা দফতরের বঞ্চনার প্রতিবাদে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে ময়ূখ ভবনের সামনের ফুটপাথে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তির নীচে ধর্নায় বসল।

সংগঠনের মূল দাবি গুলোর মধ্যে আছে, প্রশাসনিক বদলির নামে শাস্তি এবং প্রতিহিংসামূলক বদলির আদেশ দেওয়া বন্ধ করা। ১০ জনের বেশি প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকার করোনা অতিমারিতে মৃত্যু হয়েছে। এই সব শিক্ষক-শিক্ষিকারা করোনাকালে শিক্ষাবহির্ভূত কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। যেমন ‘মিড ডে মিল’ সহ রাজ্য শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তবু তাঁদের ‘করোনা যোদ্ধা’-র স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সরকারি প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে একই সরকারের অধীনস্থ বা সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের এবং মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বৈসম্যের সমাধান করার দাবি রয়েছে সংগঠনের দাবি সনদে  

দীর্ঘদিন হয়ে গেল,  রাজনৈতিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালন কমিটি গঠনের কারণে বিদ্যালয় পরিচালনায় অচল অবস্থা চলছে। সেই বিষয়ে শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সাথীর পরিবর্তে সরকারি হেলথ প্রকল্পের আওতায় প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আনার দাবি এদিন জানায় সংগঠনের নেতৃত্বনির্বাচনী কাজে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যবহার না করার দাবিও রয়েছে সংগঠনের তরফে। কোভিড প্রোটকল মেনে স্কুল এবং মাদ্রাসাগুলিতে অবিলম্বে পঠন-পাঠন চালু করার কথাও বলা হয়েছে

কলকাতা প্রেসক্লাবে ১ ডিসেম্বর স্টেট ফোরাম অব হেডমাস্টার্স-হেডমিস্ট্রেসেস সংগঠনের তরফে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। ওই প্রেস বিবৃতিতে এই দাবিগুলির কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও আছে, পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের অধীন সরকার পোষিত, অনুদানপ্রাপ্ত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা একক প্রচেষ্টায় নিজেদের দায়িত্বে শিক্ষার্থী সম্পর্কিত বিদ্যালয়ের সমস্ত একাডেমিক কাজ করেন। এছাড়াও সরকারের সমাজকল্যাণমুখী কর্মসূচী পরিচালনা করেন। কলকাতা গেজেট নোটিফিকেশন নম্বর ২১৫, ৮ মার্চ, ২০১৮ অনুযায়ী এইসব নন একাডেমিক কাজ প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্বের আওতায় পড়ে না। সুপ্রীম কোর্ট, বোম্বাই হাইকোর্ট এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টেরও এই বিষয়ে রায় আছে। যে রায় প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবির পক্ষে বলে প্রেস বিবৃতিতে জানান হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিদ্যালয়গুলিতে ক্লার্কের শুন্য পদে দীর্ঘদিন যাবৎ লোক নেওয়া হয়নি। স্কুলগুলিতে ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর পদও খালি। তাই এসব প্রতিবন্ধকতা মেনে নিয়ে নন একাডেমিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।  

সংগঠনের তরফে ১০ ডিসেম্বর, বিক্ষোভ ধর্নার পরে দাবি দাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনারের কাছে জমা দিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠনের প্রতিনিধি দল।   

                                   (এই লেখাটি ২৫ ডিসেম্বর ‘সপ্তাহ’ পত্রিকায় প্রকাশিত)                                      

 

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?