বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাগার গড়ে তুলবে গিল্ড


দীপেন্দু চৌধুরী
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা যে বৈভব এবং ব্যতিক্রমী আভিজাত্য নিয়ে পাঠকদের আমন্ত্রণ জানায় সেটা কটা দেশে পাওয়া যাবে? বাঙালির বারমাসে তের পাবনের তালিকায় এসে গেছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। কলকাতার বইমেলায় বাংলা ভাষাসহ একাধিক ভারতীয় ভাষার প্রকাশকদের ভিড় থাকে। বিদেশ থেকেও নামীদামী প্রকাশকদের ভিড়ে সত্যিই এক আন্তর্জাতিক আঙিনায় আমাদের পরস্পরের দেখা হয়। আমরা ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ে ভাসতে থাকি। দুই বাংলার সম্মেলনে সম্মিলিত ঐকতান শোনা যায় সারা বিশ্বের ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত নির্বিশেষে বৃহত্তম এক মূরচ্ছনার। আকাশ বাতাস উদ্বেল করে বিচ্ছুরিত রঙিন সামিয়ানার নীচে মহামানবের সাগর তীরে বই আমাদের আহ্বান জানায়। আন্তর্জাতিক সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম ছাপার অক্ষরে বই।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সঙ্গে তুলনা করা হয়, নিউ দিল্লি ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ার, বাংলাদেশ একুশে বইমেলা, লন্ডন বইমেলা, আবুধাবি আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা। জার্মানির অর্থনৈতিক রাজধানী হল ফ্রাঙ্কফুট। ফ্রাঙ্কফুটের আরও একটি নাম আছে। সেটা হচ্ছে ব্যাংকফুট। তবুও বলতে হয় জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত বাণিজ্যমেলা হল ফ্রাঙ্কফুটের বই মেলা। এই মেলা প্রতি বছর অক্টোবর মাসে আয়োজন হয়। এই বইমেলার আকর্ষণ শুধু যে দোকানি, ব্যবসাদার, প্রকাশক এজেন্টদের মধ্যে জনপ্রিয় এমনটা বলা যাবে না। সাধারণ মানুষের কাছেও এই বইমেলার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ফ্রাঙ্কফুটের বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা বলে দাবী করে প্রকাশকরা। আট আটটা ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে মেলার আয়তন।  কলকাতার এক ছোট প্রকাশক সংস্থার কর্ণধারের কাছে শুনেছি, বছরে একবার ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় যেতে পারলে সারা বছরের ব্যবসা হয়ে যায়। এই সংস্থাটি অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যমের বই প্রকাশ করে।
কলকাতা বইমেলা ১৯৭৬ সালে কলকাতার ময়দানে শুরুর সময়েও ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার আয়তনের সঙ্গে তুলনায় আসে না। তবু বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কলকাতার বইমেলাকে আলাদা মর্যাদা এনে দিয়েছে।  ছোট-বড় প্রকাশকের বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ে ঠাসা থাকে কলকাতা বইমেলার বিপণী। পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিনের স্টলেও ভিড় উপচে পড়ে। পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের পরিচালনায় এ বছরে ৪৪তম বইমেলা হচ্ছে। থিম কান্ট্রি রাশিয়া। এই বছর মেলায় ৬০০ টি স্টল থাকছে। মেলা ২৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবেগিল্ড সূত্রে খবর, আর্থিক মন্দার কারণে বেশিরভাগ প্রকাশক বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই প্রকাশের ঝুঁকি নেয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশক এ বছর বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই প্রকাশ করেছে।
সূত্রের খবর, গিল্ড কতৃপক্ষ জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিএ), নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং এনআরসি বিরোধী ধর্না-অবস্থান, বিক্ষোভ দেখানোর কোনরকম অনুমতি দেবে নামেলা প্রাঙ্গণে কোনওরকম প্রতিবাদ কর্মসূচীর অনুমতি দেবে না মেলা কতৃপক্ষ। এ বছরের বইমেলায় উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের হাতে বই তুলে দেবে গিল্ড কতৃপক্ষ। এবং কলকাতার কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাগার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে কলকাতার পাবলিসার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড।             

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?