ডিজিটাল সংবাদের কর্মশালা



দীপেন্দু চৌধুরী
বর্তমান সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লেখা কিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে? সংবাদ কিভাবে পরিবেশন হচ্ছে? আমাদের দেশে সামাজিক মাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) কিভাবে প্রভাব বিস্তার করছে বিষয়গুলি সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেমন ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি নতুন বিল আনছে কেন্দ্র। সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে এতটাই শক্তি রাখে। যে শক্তির কথা আমরা জানি ভারত, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের সাধারণ নির্বাচনে এই মাধ্যমের ব্যবহার প্রসঙ্গে। সম্প্রতি একটি তথ্য থেকে জানা গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  মুদ্রণ মাধ্যমের চাহিদা ৬০ মিলিয়ন থেকে ৩৫ মিলিয়নে নেমে এসেছে। পরিবর্তনের সূত্রায়নটা এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে। আমরা উপলব্ধি করতে পারছি সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারের ক্ষমতা। একটি অনুজ্জ্বল উদাহারণ, হায়দরাবাদে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ভিডিও সম্প্রতি সার্চ হয়েছে গুগুলে সব থেকে বেশি। সাইবার বিশেষঞ্জরা বলছেন ইন্টারনেট আমাদের ব্যবহার পরিবর্তনে প্রভাব ফেলছে। এবং খবর তৈরির গ্রন্থনা এক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসী আমন্ত্রণে।
সম্প্রতি কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘ডিজিটাল জার্নালইজম’ বিষয়ে একটি একদিনের কর্মশালা হয়ে গেল। ২৮ নভেম্বর এই কর্মশালায় প্রথম বিভাগে ছিল ডিজিটাল সাংবাদিকতা। এই বিষয়ে বিশেষঞ্জ সম্রাট মুখোপাধ্যায় ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। আধ্নুনিক বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়াকে কি ভাবে ব্যবহার করছে সেই বিষয়গুলি তিনি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সুচারু দক্ষতায়মুদ্রণ মাধ্যম গত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা দেখে নিজদের অবস্থান বদলে ফেলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ধাঁচে প্রিন্ট মিডিয়া ছবির সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এদিনের আলোচনা থেকে জানা গেল। যেমন জানা গেল ফেসবুকেও নিউজ ফিড আসছে। খবরের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে পাঠকরা একুশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে, সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার বাজারে প্রিন্ট মিডিয়ার উপর ভরসা করেন বেশি সংখ্যক মানুষকারণ প্রিন্ট মিডিয়ার ‘ব্র্যান্ড’ মূল্য আছে। পরিকাঠামো আছে। স্থায়িত্ব আছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তিনটে বিষয় বেশিরভাগ সংস্থার নেই। তাই ‘ফেক নিউজ’ বেশি হয়। ৭০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের খবরে বিশ্বাস করেন না। এই সমস্যাটা ডিজিটাল মিডিয়ার কতৃপক্ষকে নিবিড় আবেদনে ভাবাচ্ছে।
এদিনের আলোচনায় জানা গেল ‘ব্র্যান্ড’ সংস্থা হলে মানুষ ‘ডিজিটাল নিউজ’-এ বিশ্বাস করছে। যেমন ‘ফার্স্টপোস্ট’, ‘ব্লুমবার্গ’-র মতো সংস্থার খবরে মানুষ আস্থা রাখছে। ‘দ্য ওয়ার’ নামে একটি সংস্থা ডিজিটাল মাধ্যমে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সামাজিক মাধ্যমে পাঠক প্রথমে নিউজ স্ক্যান করে। তারপরে পড়ে। আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের সর্ট ফিল্ম দেখার অভ্যেস গড়ে উঠেছে এটা মেনে নিতেই হবে। ২৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ভাগে ছিল সাইবার অপরাধ এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা। এবং সাইবার আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। সেদিন আলোচনার জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন সাইবার আইন বিশেষঞ্জ বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রথমেই উল্লেখ করলেন আর্টিকেল ৯১ (Article 91) আপনি বা আপনারা কতটা মেনে চলবেন? যে খবর আপনারা করছেন তার দায়িত্ব কে নেবেন? ভারতের সীমান্ত পার হলে আপনার লেখা কি হবে আপনি জানেন না। বিভাসবাবুর সঙ্গে একমত হয়ে বিষয়গুলি সাংবাদিকদের নতুন করে ভাবতে হবে। তার কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম এখন প্রত্যেকটা ফৌজদারি মামলা বৈদ্যুতিন সাক্ষী আইনজীবীদের সাহায্য করছে। তিনি দাবি করলেন হুইসেল ব্লোয়ারদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কোথাও একটা মিল আছে। মৌলিক অধিকার নিয়ে ভারতীয় নাগরিক যেমন ভাবছে তেমনি মৌলিক আইন নিয়েও ভাবা উচিৎ। বিশেষত সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে। বর্তমান সময়ে একজন মানুষ দুটো পরিচিতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এক, শারীরিকভাবে দুই, ভার্চুয়াল পরিচিতি। সেই কারণে বিভাসবাবুর পরামর্শ ‘ফেক নিউজ’ থেকে বাঁচতে খবর শেয়ার করার সময় লিখতে হবে ‘দেখুনতো এটা ফেক কিনা?’ সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আইন এনেছে। ‘জিডিপিআর’ (General Data protection Regulation, GDPR) নামে এই আইন এসে যাওয়ায় ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়বে। বিভাসবাবু প্রস্তাব দিয়েছে, সেক্টর ফাইভের সমস্ত সংস্থা বৈঠকে বসা উচিৎ। কারণ অনেকেই এই আইনের বিষয়ে জানেন না।
ভারতেও ‘পার্সন্যাল ডাটা প্রোটেকশন বিল ২০১৮’ এসে গেলে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তিন বছর কারাবাস নিশ্চিতসংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ব্রিটিশ আইনের পরিবর্তে প্রস্তাবিত একটি নতুন বিলে ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে কেন্দ্র। ওই বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের প্রকাশকদের ‘রেজিস্টার অব নিউজপেপার অব ইন্ডিয়া’র কাছে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নথিভুক্তি করাতে হবে। শেষ কথাটি তাই বলতে হয় ল্যাপটপ, স্মার্টফোন হাতে ভারতে কেন সারা বিশ্বেই ‘ডিজিটাল মিডিয়া’কে বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না।                        

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?