নতুন সন্ধিক্ষণের সামনে বাংলা
দীপেন্দু চৌধুরী
গত এক দশক থেকে বাংলার মানুষ মিছিল খুঁজছে। যৌথ নেতৃত্বের মিছিল। আশ্রয়
খুঁজছে যৌথ মঞ্চে। পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যে গত এক দশকে নতুন এক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার।
এবং রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। কেন্দ্রের একের পর এক জনবিরোধী নীতি এবং
কর্মসূচীর কারণে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে ছাত্র-যুব, শ্রমিক-কৃষক, বুদ্ধিজীবীরা
রাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলনে নেমেছে। প্রশ্ন উঠছে দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি নিয়ে। ২০১৪
সাল থেকে দেশে বেকারত্বের রেকর্ডের প্রসঙ্গে আমরা ভালোই জানি। কিন্তু
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘তিন দাওয়াই’-য়ের নতুন গল্পকথা শোনাচ্ছেন তার ‘ভারত
মাতা কি জয়’ স্লোগান দেওয়া নাগরিককে।
কাশ্মীর থেকে ৩৭০ বিলোপ, রামমন্দির এবং নাগরিকত্ব
আইন সংশোধন। এই তিন কুমিরের বাচ্চাকে সামনে এনেছেন বিজেপির ভোট কুশলী ‘হিন্দু
সম্রাট’ নরেন্দ্র মোদী। কারণ তাঁকে (পড়ুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে) সিএএ এবং
এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের আওয়াজকে আড়াল করতে হবে। মোদী কী এই প্রথম বিরোধী শক্তিকে
ভয় পাচ্ছেন? সেই কারণেই বিরোধীরা বলছে, দেশের উন্নয়নের স্লোগান এখন ঠান্ডা ঘরে।
প্রতি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ করে টাকা এখন ঘুম পরীদের দেশে। এসব
থেকে নজর ঘোরাতেই কড়া মেরুকরণের পথে হাঁটতে হচ্ছে বিজেপিকে। আমাদের রাজ্যেও
কংগ্রেসের ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি’ শুন্যতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি নিজেদের প্রসার
প্রতিপত্তি বাড়াতে পেরেছে। আড়াল থেকে রাজ্যের যে শক্তির মদত থাকুক না কেন!
নিন্দুকদের কথা বললাম।
২০১১ সালে ‘বামফ্রন্ট সরকার’-র পতনের পর বাংলায়
বাম রাজনীতি কিছুটা কোন ঠাসা হয়েছে। বিভিন্ন সীমা বদ্ধতার কারণে বামেরা সারা
ভারতের সঙ্গে এই বাংলাতেও শক্তি খুইয়েছে। ভোট বাক্সে সেই রক্তক্ষরণ প্রতিফলিত হয়েই
চলেছে। পুরনো বিতর্কে না গিয়ে বলা যায়
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বাম এবং কংগ্রেস ‘শীতঘুম’ ছেড়ে রাস্তায় কদম কদম পা মেলাতে
চাইছে। এই বছর লোকসভা ভোটের পরে বিধানসভার তিনটে উপনির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে
বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। এটা নতুন সমীকরণের জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প বাঁচাও, ছাটাই রোধ করো, এনআরসি বিরোধিতা সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে
৩০ নভেম্বর থেকে এবং ৪ ডিসেম্বর থেকে লং মার্চ হয়েছে এই বাংলায়। নেতৃত্ব দিয়েছে
বিভিন্ন বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সোমেন মিত্র
সংগঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। রাস্তায় কংগ্রেস
নেতৃত্ব নেমেছে। কর্মী-সমর্থকদের হাতে কংগ্রেসের পতাকা দেখা যাচ্ছে। প্রদেশ
কংগ্রেস মিল্টন রশীদ, অমিতাভ চক্রবর্তীদের
মতো নতুন তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনতে পেরেছে। ছাত্র-যুব নেতৃত্বও সোমেন মিত্রের
নেতৃত্বে আস্থা রাখতে চাইছে। প্রবীণ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য সামনে থেকে নেতৃত্ব
দিচ্ছেন। কংগ্রেসের স্লোগান ‘বন্দে মাতরম’-র কন্ঠস্বর ছাত্র-যুবদের মুখে আমরা আবার
শুনতে পাচ্ছি। পণ্ডিত নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধীর নাম নতুন করে
প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাংলার রাস্তায়। ব্যানারে প্ল্যাকার্ডে গাধীঁ পরিবারের ছবি দেখা
যাচ্ছে। কলকাতা তথা বাংলার রাস্তায়। জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গাধীঁ এবং কংগ্রেস
নেতা রাহুল গাধীঁ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে আগেই সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছেন আন্দোলন
সংগঠিত করার জন্য।
আলোচ্য অচলয়াতনে ২৭ ডিসেম্বর কলকাতা শহরে এক ঐতিহাসিক মিছিল। ২৩ ডিসেম্বর
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এক বিবৃতিতে এই মিছিলে রাজ্যের সব স্তরের
মানুষকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কালা কানুন ‘সিএএ’ চাপিয়ে দেওয়া এবং ‘এনআরসি’ বাতিলের দাবিতে ২৭
ডিসেম্বর দুপুর ২ টো ৩০ মিনিটে কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মহাজাতি সদন
পর্যন্ত কংগ্রেস ও বাম ফ্রন্টের যৌথ মহামিছিল সর্বাত্মক সফল করার জন্য সকলের কাছে
আহ্বান জানানো হচ্ছে। বামফ্রন্ট থেকেও আলাদা আলাদাভাবে এই মহামিছিলের প্রচার করা
হয়েছে। বাংলার এই সন্ধিক্ষণে লাল পতাকার ভিড়ে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক, নেতাদের হাতে
দলের প্রতীক ‘হাত’ থাকবে ব্যানারে, প্ল্যাকার্ডে। ইনক্লাব স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে
‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবে। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে,
যাবে না ফিরে-/এই ভারতের মহা মানবের সাগরতীরে’। ভারতের আত্মা ফিরে পাবে 'ধর্ম নিরপেক্ষ' ভারতকে।
সামনে আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতম শান্তির পথে পা মেলাতে।
Comments
Post a Comment