পরিবেশ বান্ধব সবুজ বিশ্বের ছবি
দীপেন্দু চৌধুরী
ছবি দেখার ছবি, ছবি শোনার ছবি। গত কয়েক দশকের
অভিঞ্জতা থেকে বলা যায় আমাদের দেশে যারা সিনেমার চিত্রনাট্য লেখেন, পরিচালনা করেন
তারা মূলত বেছে নেন গ্রামের মহাজন, শহরের চালের ব্যবসায়ী, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের
খলনায়ক এবং একজন প্রতিবাদী নায়ককে। বাণিজ্যিক মুন্সিয়ানায় এই সব ছবি তৈরি করা হয় বাংলা এবং সর্বভারতীয়
প্রেক্ষাপটে। ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকে। আর্ট ফিল্ম অথবা সমান্তরাল ছবির ক্ষেত্রে। ১৯৫৯ সালের একটি প্রবন্ধে সত্যজিৎ রায় আক্ষেপের সঙ্গে লিখেছিলেন,
‘’চলচ্চিত্র শিল্প কিনা তা নিয়ে এখনও বিতর্ক ওঠে।‘’ বিশ্ববরেণ্য ভারতীয় চলচ্চিত্র
পরিচালকের মনে হয়েছিল, ‘’আসলে গোলমাল ওই শিল্প কথাটাকে নিয়েই। শিল্প না বলে যদি
ভাষা বলা হয়, তাহলে বোধ হয় চলচ্চিত্রের স্বরূপটা আরো স্পষ্ট হয়, এবং তর্কেরও আর
অবকাশ থাকে না।‘’ এই কথা সত্যজিৎ রায় বলার পরে আমরা প্রায় ৬০ বছর পেরিয়ে এলাম।
সিনেমা এখন আর তিন ঘণ্টা, দু’ঘণ্টা অথবা এক ঘণ্টা থিয়েটার হলে বসে দেখার প্রয়োজন
নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এবং ইউ টিউবের মাধ্যমে আমরা স্মার্টফোন হাতে যে কোন
সময় পছন্দমতো ছবি দেখে নিতে পারি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব
উষ্ণায়ন, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ইত্যাদি বিষয়ের ছবি বাঙালি তথা ভারতীয় দর্শকরা কতটা
দেখেন। এবং এই বিষয় নিয়ে কতজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছবি করেন? তরুণ প্রজন্মের নতুন
পরিচালক হোক অথবা প্রতিষ্ঠিত নামজাদা পরিচালকের দল? প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রশ্ন
তরান্বিত হতেই থাকে। এমন বিতর্ক চলমান থাকলেও কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। ঠিক
সেই প্রেক্ষাপটকে মনে রেখে কলকাতার আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল, স্বেচ্ছাসেবী
সংস্থা সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া রিসোর্স
সেন্টার (ইএমআরসি), এবং বেঙ্গল ফটোগ্রাফি ইন্সটিটিউট (বিপিআই) যৌথ উদ্যোগে একটি
ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী বললেই হবে না। নতুনত্বও
আছে। এক ঝাঁক তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান। ২৭ নভেম্বর লিঙ্কন
সভাঘরে অনুষ্ঠিত সারাদিন ধরে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছিল, ‘’ইকো
সিনেমাঃ এ গ্রিনার ওয়ার্ল্ড থ্রু আর্ট’। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং বক্তব্যের পরে আমরা ছ’টি
ছবি দেখি। সর্ট ফিল্ম বিভাগে স্বল্প দৈর্ঘের ছবি ছিল তিনটে এবং লং ফিল্ম বিভাগে
ছিল তিনটে ছবি। একটি ছবির কথা আলাদাভাবে লিখতেই হচ্ছে, বর্ষণসিক্ত মেঘালয়ের এক
সন্ধ্যায় ছবির বিস্তার হয়েছে। নিঃসঙ্গ এক বিলুপ্তপ্রায় ব্যাঙ এই কাহিনীর প্রধান
চরিত্র। একটি এক্সমাস স্ত্রী ব্যাঙ সে খুঁজে ফেরে তার তরুণ বন্ধুকে। মানুষের অজানা
অচেনা আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় সে খোঁজে তার সঙ্গীকে। ছবির
বিশিষ্টতা এখানেই তরুণ পরিচালক অস্বীকা কাপুর ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল এমনভাবে
ব্যাবহার করেছেন আমরা পরিবেশ ভারসাম্যের, প্রকৃতির এক আহ্বান শুনতে পাই এই ছবির
আবেদনে। ডিটেলিংয়ের কাজ এতটাই উন্নত মানের। ছবিটির মাধ্যমে শিলং রাজ্যের চিরায়ত
শব্দ আমরা শুনতে পাই। লং ফিল্ম বিভাগে ছবিটি প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে।
পাশাপাশি ছিল পেন্টিং এবং ফটোগ্রাফি বিষয়ক
প্রতিযোগিতা। এই দু’টি প্রতিযোগিতাতেও তরুণ প্রজন্মের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘এ’,
‘বি’ এবং ‘সি’ বিভাগের ১৯টি ছবি প্রতিযোগিতায় ছিল। সিনেমার মতই পেন্টিং ছিল পরিবেশ
বিষয়ক। বিষয়গুলি ছিল বায়ু দূষণ, সংরক্ষণ, সাস্টেনেবিলিটি, রিসাইক্লেনিং এবং সবুজ
প্রজন্মের আহ্বান। এদিনের অনুষ্ঠানে সেফের ডিরেক্টর দীপায়ন দে বলেন, ‘’দ্য
ইকো-সিনেমা-এ গ্রীনার ওয়ার্ল্ড থ্রু আর্ট’ সৃষ্টিশীল শিল্প এবং ডিজিটাল মাধ্যমের
জন্য একটি উদ্যোগ। আমাদের সমাজ শিক্ষা এবং জীবনশৈলীর সঙ্গে ছান্দিকভাবে সহনশীল
পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়াসে আমরা এই ধরণের অনুষ্ঠান এবং প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত
হয়েছি।‘’
উদ্বোধনী ভাষণে কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের
ডাইরেক্টর মনিকা শী বলেন, ‘’আমরা গর্বিত আমাদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য
কারণ আমরা যেমন নিজেদের দেশের উষ্ণায়ন কমাতে পেরেছি। বিভিন্ন দেশকেও এই বিষয়ে
সহযোগিতা করেছি। কলকাতার ইউ এস কনস্যুলেট জেনারেলের অফিস সবুজ পরিবেশের জন্য, পরিবেশ
বান্ধব সমাজের জন্য মানুষকে সচেতন করতে এই ধরণের আরও অনুষ্ঠানকে সব সময় সহযোগিতা
করবে
Comments
Post a Comment