আজাদ হিন্দ ফৌজের তহবিল ও সম্পদ কোথায়




দীপেন্দু চৌধুরী
বর্তমান সময়ের ইতিহাসবিদরা বিষয়টা নতুন করে গবেষণা করতে পারেন। অথবা সমাজ বিঞ্জানীরা। একজন প্রয়াত, দ্বিতীয়জন মৃত্যুর পরেও ‘জীবন্মৃত’-র বিতর্ক টেনে চলেছেন। এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন নিত্য নতুন তর্কবিতর্কের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে খুঁচিয়ে তুলছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আলোচ্য দু’ই প্রধান ব্যক্তিকে কারণে অকারণে এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। আমরা বলতে চাইছি জওহরলাল নেহরু এবং সুভাষচন্দ্র বসুর কথা। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের একশো চৌত্রিশ বছরের ইতিহাসে বহু বিখ্যাত নেতার আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন ব্যক্তির নাম আমাদের প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করতে হবে। এই তিনজন হলেন, মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধি, পণ্ডিত জহরলাল নেহরু এবং  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে কঠিন সময়ে এই তিনজন সর্বজনগ্রাহ্য নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর আধুনিক সময়েও এই তিনজন বিদ্যান ব্যক্তির উপস্থিতি ভীষণভাবে আকর্ষণ করে দেশ এবং সমাজকেনেহরু রাজনীতিতে এসেছিলেন বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। ‘হোম রুল’ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। পরের সময়টা স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা উত্তর সময়ে নেহরুর নেতৃত্বে ভারত একটা উচ্চতায় পৌঁছায়। ভারতে তৈরি হয় নেহরু চিন্তার ঘরানা। নেহরু চিন্তার এতটাই প্রভাব।
নেহরু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজ-চেতনার প্রশ্নে গাঁধির সঙ্গে তুলনায় নেতাজী সুভাষের অনেক অনেক কাছাকাছি এসেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসী রাজনীতির পটভূমিকায় দু’জন শেষ পর্যন্ত ভিন্ন পথের যাত্রী হয়েছিলেন। তবুও বলতেই হবে গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তারা কিন্তু অনেকটাই কাছাকাছি ছিলেন। দু’জনেই চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে পরিচালিত স্বরাজ্য পার্টির মাধ্যমে স্বাধীনতার দাবীর প্রধান প্রবক্তা ছিলেন। যুব-ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করা, কংগ্রেসের মঞ্চে শ্রমিক-কৃষকদের টেনে আনার ক্ষেত্রে দু’জনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল যা আজও গর্বের সঙ্গে বলতে হয়। তৎকালীন কংগ্রেস দলে বামপন্থী ঢেউয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন নেহরু এবং সুভাষ। তবু কেউ কেউ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সমালোচনা করছেন। গণতন্ত্রে তথা বৃহত্তর গণতন্ত্রে আলোচনা সমালোচনা চিন্তা করার সমন্বয়ের দরজা খুলে দেয়। বিশেষত আজাদ হিন্দ বাহিনী গড়ে তোলার অন্যতম ব্যক্তি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য বিষয়ে সমালোচনা নতুন করে উঠছে ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেছিলেন। ১৯৪৫  সালের ১৮ অগস্ট তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। এই তথ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বহুল প্রচলিত এবং প্রতিষ্ঠিত। এই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করছে সারা ভারত লিগাল এড ফোরাম।    
সম্প্রতি অল ইন্ডিয়া লিগাল এড ফোরাম আজাদ হিন্দ বাহিনীর ৭৫তম বর্ষপূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে। ২১ অক্টোবর কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এই আলোচনাসভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট সুভাষচন্দ্র বসুর কবে এবং কোথায় মৃত্যু হয়েছিল। সেই বিষয়ে সঠিক এবং তথ্য নির্ভর রিপোর্ট চাই। লিগাল এড ফোরাম আরও প্রশ্ন তুলছে, তিন তিনটে তদন্ত কমিশন গঠন করেও সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা হয়নি। এক প্রেস বিবৃতিতে সারা ভারত লিগাল এড ফোরাম জানাচ্ছে যে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের বা পৃথকীকরণের পর আমাদের তথ্য-অনুসন্ধানকারিরা রাশিয়ার আর্কাইভ থেকে নেতাজীর শেষ জীবন সম্পর্কিত প্রচুর নথি সংগ্রহ করেছেন।‘’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘’১৯৪৫ সালের অগস্ট মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে সুভাষচন্দ্র বসুর অবস্থান সম্পর্কে জানা যায় যে তিনি সেই দেশে ছিলেন। চার বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লাল বাজার মহাফেজখানা থেকে নেতাজী সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি প্রকাশ করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা অনুরোধ করছি, লালবাজার মহাফেজখানা থেকে আজাদহিন্দ ফৌজ সংক্রান্ত বাকী নথিগুলো প্রকাশ করা হোক‘’
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও নেই আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগৃহীত তহবিল এবং সম্পদের কোনও খোঁজও জানে না কেউসারা ভারত লিগাল এড ফোরাম প্রেস বিবৃতি মাধ্যমে দাবি করছে, ‘এখনও পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজের সোনা, গয়না, হীরে সহ সকলপ্রকার সম্পত্তি যার তৎকালীন মোট আর্থিক মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকাসেই টাকার কোনও হদিস নেই। কোথায় গেল এই বহু মূল্য সম্পত্তি, এটা এখনও রহস্য।’ এদিনের আলোচনাসভায় ফোরাম দাবি জানাল, এই সম্পত্তির পরিণতি খুঁজে বার করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তদন্ত কমিশন গড়ে তোলার। এদিনের আলোচনাভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নেতাজীর ভাইঝি চিত্রা ঘোষ, গবেষক পূরবী রায়, আইনজীবী চান্দ্রেয়ী আলম এবং আইপিএস পঙ্কজ দত্ত।
প্রাক্তন সাংসদ এবং শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসুর বহু লেখায় পড়েছি, ‘নেহরু এবং সুভাষচন্দ্রের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।’ নেতাজী সম্পর্কিত যে সব বিতর্ক নতুন করে উঠে এল এদিনের আলোচনা সভায়, সে বিষয়ে কিছু বিতর্ক কেউ কেউ তুলছেন ঠিকই। তবে ওইসব বিতর্ক কতটা তথ্য নির্ভর সেটাও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এই বিষয়ে আরও ভালো আলোকপাত করতে পারেন নেতাজী গবেষকরা। আমরা সেই অপেক্ষায় রইলাম।                                 

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?