আদালতের রায়ের পরেও পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের প্রশ্ন কেন উঠছে?




 দীপেন্দু চৌধুরী
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে আমাদের রাজ্যের ৪২টা আসনে ৭৮, ৭৯৯টি বুথে গণতন্ত্রের মহোৎসবে অংশ নিচ্ছেন রাজ্যের আমজনতা। রাজ্যের সব বুথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা নিয়ে আশ্বস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রথম দফার ভোট মিটতেই বিরোধীরা সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে সরব হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বছরওয়ারি হিসেব দিয়ে বলছেন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া আছে। ‘মোদী-দিদি’ একই মুদ্রার এপীঠ ওপীঠতার মতে আমি একটা হিসেব দিচ্ছি। লোকসভা কেন্দ্রের নাম আমি এখনই বলছি না। সময় মতো বলে দেব।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার একটি লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৪ সালে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী পেল ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৮১টি ভোট। সে বছর বিরোধীদের সর্বমোট ভোট ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৮৮টি। নির্দলরা পেয়েছিল ৯৮৪টি ভোট। নির্দলদের ভোট ধরা হয়নি। পাশাপাশি ওই একই কেন্দ্রে ২০১৬ সালে বিধানসভা যদি ধরা হয়, মোট ৭টা বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তি ছিল ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯৬ টি। সেখানে বিরোধীদের সম্মীলিত ভোট ছিল ৬ লাখ ১২ হাজার ৩১টি। এই হিসেব ধরলে বিরোধীদের সম্মিলিত ভোট কমে যাওয়ার মূল কারণ বিজেপি ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৮৮ হাজার ৪১৪টি ভোট কম পেয়েছিল। সিপিএম নেতা শমীকবাবুর মতে, তৃণমূল কংগ্রেস যতগুলি ভোট কম পেয়েছে সেটা হিসেব ধরলে বিজেপির ভোটগুলি তৃণমূলে যায়। ২০১৪ সালের হিসেব দেখুন শাসক দলের থেকে বিরোধীরা ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৬০৭টি ভোট বেশি পেয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সম্মিলিত বিরোধীদের ভোট ১৬ হাজার ৩৫টি বেশি ছিল।
অর্থাৎ তৃণমূলের থেকে বিরোধীদের সম্মিলিত ভোট বেশি ছিল। আবার পঞ্চায়েতের হিসেব ধরলে ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭২টা পঞ্চায়েত আছে। তার মোট আসন সংখ্যা গ্রামপঞ্চায়েতে ১০৮১, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২০৮, জেলা পরিষদে ২০টি আসন। ৭২টা গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০০৬টি গ্রামসভা আসনে, ১৯৭টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে এবং ২০টি জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূল কংগ্রেস বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। যে ৪টে পঞ্চায়েত আসনে ভোট হয়েছিল সেই পঞ্চায়েতে ১০০ শতাংশ আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে। শমীকবাবুর অভিযোগ রাজ্যে জেলা পরিষদে বিরোধী নেই বললেই চলে। পঞ্চায়েত ভোটে ৩৫% আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের ছবি এটাই। তিনি বলেন, ‘’এই কারণে আমরা চেয়েছি রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হোক। ৫৪২টা লোকসভা আসনে পশ্চিমবঙ্গ বাদে কোনও রাজ্যে এই ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে? পঞ্চায়েত ভোটের সময় লোকসভা ভিত্তিক আসনে কেউ ভোট দিতে পারেনি।‘’
তিনি আরও বলেন, ‘’এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরাও ভোট দেওয়ার সুযোগই পায়নি। ৬৮টি পঞ্চায়েতে (ওই একই লোকসভা কেন্দ্রে) কোনও আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারেনি। চারটে আসনে যারা প্রাথী হয়েছিল তারাও ভোট দিতে পারেনি।‘’
সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরধীদের অনেক অভিযোগ ছিল। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি উচ্চ আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছিল। সেই মামলার রায়ও হয়ে গেছে। রায় আমাদের পক্ষে গেছে। আদালতের রায়ের পরেও পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? আমরা পঞ্চায়েত গঠন করেছি। মমতাদি বলেছেন না? বিরোধীদের ‘রামধনু জোট’আমিও একটা হিসেব দিচ্ছি। গণতন্ত্রের বিদ্রুপ বলুন বা উপহাস। কেরালায় ২০টি আসনে একদফায় ভোট। অন্ধ্র প্রদেশে ২৫টা আসনে এক দফায়, তামিল নাড়ুতে ৩৯টা আসনে এক দফায়। কিন্তু আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ৪২টা লোকসভা আসনে ভোট ৭ দফায় কেন? আমরা কি নির্বাচন কমিশন চালাই? এর পরেও সিপিএম বলবে আমাদের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া আছে? রাজ্যে যদি সন্ত্রাসের বাতাবরণ থাকে তাহলে সিপিএম একযুগ পরে নন্দীগ্রামে তাঁদের দলীয় কার্যালয় খুলল কি ভাবে?
ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘’তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে নির্বাচন কমিশন আছে নাকি? যত বেশি ফেজ বাড়বে ততবেশি লিড বাড়বে তৃণমূল কংগ্রেসের। বাহিনী দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন সেখানে আমরা কি করব? সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৮০% বুথে আধাসেনা থাকবে। আমাদের নেত্রী তাই বলেছেন দেশ বাঁচাতে একমাত্র রাস্তা তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে তৃণমূলের সাহায্য লাগবে।’’ তৃণমূলের শীর্ষনেতার মতে, সমাপতনটা দেখুন দফা বাড়লেই আমাদের আসন বাড়ছে। ২০০৪ সালে আমাদের রাজ্যে এক দফায় লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ১টা আসন। ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৩ দফায় ভোট হয়। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯টা আসন। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৫ দফায় লোকসভার ভোট হয়। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৪টা আসন। ফিরহাদ হাকিম আরও বলেন, ‘’চলতি বছরে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে আমাদের রাজ্যে ৭ দফায় ভোট হচ্ছে। আপনারা অপেক্ষায় থাকুন। সিপিএম পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছে না। সব বুথে কর্মী দিতে পারছে না। তাই এসব হতাশা থেকে বলছে।‘’                           


Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?