সমৃদ্ধ ধ্রুপদী আলোর খোঁজে



দীপেন্দু চৌধুরী
গত কয়েক বছর কলকাতা শহরে নাগরিক সমাবেশে যাওয়ার আমার সুযোগ হচ্ছে। উল্লেখিত অনুষ্ঠানগুলির আমন্ত্রণ পেয়ে আমি গর্বিত। অতি ধীর লয়ে কলকাতা শহরের আর্থ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। আমার অহংকার হয় অভিজাত কলকাতার সভাঘ্রে উপস্থিত থাকতে পেরে। উচ্চকিত নয় কিন্তু উন্নত ঘরানার অনুষ্ঠান এগুলি। এখানে সেমিনার এবং বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে তর্কপ্রিয় বাঙালির সভা-সমাবেশ হয়। ভারতীয়, এশিয়ান, আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান রাজনীতি, সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতি, সামাজিক, ট্রান্সজেন্ডার, নাটক, চলচ্চিত্র বিভিন্ন বিষয়ের মতবিনিময় সভা এগুলি। কলকাতায় বিভিন্ন বিদেশী কনসাল জেনারেল যেমন আয়োজন করে। পাশাপাশি কলকাতা জাদুঘর, সাহিত্য অ্যাকাডেমি এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এইসব অনুষ্ঠানগুলি আয়োজন করে থাকেএই ধরণের অনুষ্ঠান ব্রিটিশ উপনিবেশ সময়কাল থেকেই কলকাতা শহরে হয়ে আসছে। নাগরিক শহরের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রথমসারির বিদগ্ধজনেরা উপস্থিত থাকেন। এইসব সভায় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শহরের উন্নাসিক নাগরিকদেরও ভীড় নজরে পড়ে। কলকাতার মা, মাসি, কাকিমা, দিদি, বোন এবং আমাদের বন্ধুস্থানীয়রা উত্তর আধুনিক নারীবাদে বিশ্বাস করেন। আমার আপত্তি নেই। অনুষ্ঠানগুলির আয়োজক বিদেশী সরকারি সংস্থাগুলি স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের অভিজাত ভাষা ইংরেজিতে আলোচনার ব্যবস্থা করে থাকেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালও ঔপনিবেশিক দায় এবং দায়িত্ব থেকে ইংরেজি বেছে নেয় সম্ভবত। এইসব অনুষ্ঠানগুলি অবশ্যই উচ্চ ঘরানার হয়ে থাকে। এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলা যায়। আমি একটি পুরনো বিতর্ককে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছি। আঞ্চলিক মূল্যবোধের উচ্চে উঠে। ব্রিটিশ সময় থেকে ধরে নেওয়া হয় ইংরেজি না জানা শিক্ষিত মানুষ উচ্চশিক্ষিত হতে পারেন না। ধ্রুপদী ঘরানার আয়োজনে অথবা পঙতিতে তাঁরা অবাঞ্ছিত থেকে যান। মাছের মুড়োর ভাগ তাঁদের দেওয়া হয় না।   
গত কাল ২ এপ্রিল, ২০১৯ কলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল হল এবং ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কেলের যৌথ উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার অনুষ্ঠান ছিল। বিষয় ‘ক্লাসিক হুয়াই ইট ম্যাটার্স’ (CLASSICS WHY IT MATTERS)?  বক্তা ছিলেন হ্যারো স্কুল ইউ কে-র ক্ল্যাসিক বিষয়ের প্রধান স্টিভেন কেনেডি (Steven Kennedy)মঙ্গলবার ২ এপ্রিল সম্মেলন সভাঘরে প্রশ্ন উত্তরের সময় এক বাঙালি শ্রোতা ভাঙ্গাচোরা ইংরেজিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছিলেন। ইংরেজি স্কুল কলেজে পড়েছেন বাঙালি নাগরিক ভদ্রমণ্ডলী (পিতৃতন্ত্র এবং মাতৃতন্ত্রের) কৌশলী সুললিত সমাজের প্রতিনিধি তাঁরা। হেসে গড়িয়ে পড়ছিলেন। ভদ্রলোকের ভুল ইংরেজি শুনে। পরস্পরের দিকে চাওয়াচায়ি করে ঠোঁট বাঁকাচ্ছিলেন। অত্যন্ত নিম্বমানের দেহভঙ্গি, বডি লাঙ্গোয়েজ। এদিন উচ্চশিক্ষিত ধ্রুপদী সাহিত্যের ইংরেজি স্কুলের শিক্ষক স্টিভেন কেনেডি ভুল ইংরেজি বলা তার শ্রোতার প্রশ্ন মন দিয়ে শুনেছেন। এবং নিজেরমতো করে বুঝে নিয়ে পরে গুরুত্ব দিয়ে উত্তর দিয়েছেন। গত বছর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে একটি বাংলা বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক তরুণ প্রকাশক গায়ের জোরে ভুল ইংরেজি বলে গেলেন। সভাঘরের একই অবস্থা হয়েছিল। যদিও কেউ কেউ তরুণ উদ্যোগীকে উৎসাহ দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দিয়েছিলেন সেদিন।  
কলকাতা শহরের উল্লেখিত বনেদী অনুষ্ঠান গুলিতে প্রশ্ন করার জন্য বাংলা হিন্দি এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্ন নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় না? ভালো ইংরেজি না জানা অনেক বাঙালি ধ্রুপদী সাহিত্য, রাজনীতি, বিঞ্জান, সমাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে ইংরেজি জানা অনেক অনেক তাত্বিককে প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানাতে পারেন। বাংলা, হিন্দি, সাঁওতালি এবং ভারতীয় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় (যদি সম্ভব হয়) আয়োজক সংস্থা এইসব প্রশ্ন সংগ্রহ করে উচ্চশিক্ষিত ঞ্জানী পণ্ডিত সাহেবদের  জন্য ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে দিলে সভাঘর প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সমৃদ্ধ আলোয় আরও মুখরিত হতে পারে।                     

Comments

Popular posts from this blog

দু’জন বাঙালি বিঞ্জানীর গণিতিক পদার্থ বিঞ্জানে বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কার

‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন’ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্র

লোকসভা অধিবেশন শুরুর পরেই কি ধর্মঘট প্রত্যাহার?